গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসা জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০২৬ সালে নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন’সহ ৫ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পল্টন মোড়ে জামায়াতসহ আন্দোলনরত ৮ দলের সমাবেশে এ কথা বলেন শফিকুর রহমান। যাঁরা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাঁদের জন্য ২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমাদের দাবি কম, কিন্তু খুব সুস্পষ্ট। জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে।…আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
দেশের জনগণ নির্বাচনের আগে গণভোট চায় বলে দাবি করেন শফিকুর রহমান। গণভোটের বিষয়ে সব দল একমত উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন?
দলগুলো একমত হয়ে যখন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে, তখন গণভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হলে কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকবে না।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতসহ আট দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। এটা নিয়ে কেউ যাতে ধূম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা না করে।
জামায়াত আমির বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণীত হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা বলবে, বাকিদের তা–ই মেনে নিতে হবে। কিন্তু কেউ কেউ সেটি মেনে নিতে রাজি নয়। জুলাই সনদেই যদি কেউ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখায়, জাতীয় নির্বাচনের প্রতি তারা শ্রদ্ধা কীভাবে দেখাবে?
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের আমির বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত মানুষদের ভাষা বুঝতে হবে। (আগামী নির্বাচনে) কোনো দলের নয়, জনতার বিজয় হবে। জনতা কী চায়, কান পেতে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যারা এটি বুঝতে ব্যর্থ হবে, নিজের পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘দলগুলো ভদ্র ভাষায় কথা বলছে। ভদ্র ভাষায়ই কথা বলবে। তবে দাবির ব্যাপারে হিমালয়ের মতো অনড় থাকবে। কারণ, এ দাবি জনগণের দাবি, কোনো দলের দাবি নয়। ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। তাই ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে দেশের মানুষ মাথা নত করবে না।’
আট দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘তৈরি হোন। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের দাবি আদায় না হবে, আমাদের আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলতে থাকবে, ইনশা আল্লাহ।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, সমাবেশের পর আট দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে মিলিত হবেন। দ্রুতই পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আট দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেন জামায়াতের আমির।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সঞ্চালনা করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাইয়ুম এবং সহপ্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজাদ্দিদ বিল্লাহ আল মাদানী, খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাসিত আজাদ ও যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজি, মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, সাধারণ সম্পাদক কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।









