নব্বই দশকের শেষ দিকে সিনেমায় অভিনয় শুরু সাদিকা পারভীন পপির। একটানা কাজ করেছেন। ২০২০ সালে সর্বশেষ তিনি ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ নামের একটি সিনেমার শুটিং করেন। এরপর একেবারে আড়ালে চলে যান পপি। পাঁচ বছর আড়াল জীবনযাপনের পর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। আড়াল ভাঙার পর জানা যায়, পপি বিয়ে করে পুরোদস্তুর সংসারী। তিনি এক পুত্রসন্তানের মা। পারিবারিক বিরোধের জেরে তখন প্রকাশ্যে এলেও তারপর আবার আড়ালে চলে যান। আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে একসময়ের জনপ্রিয় এই নায়িকা জানালেন, তিনি আবার সিনেমায় ফিরবেন। তবে কবে, তা শিগগিরই জানাবেন।
চলচ্চিত্রে কীভাবে ফিরবেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পপি বললেন, ‘অভিনয়ে ফিরব না, এটা পুরোপুরি নিশ্চিত। তবে পুরোনো কয়েকটি কাজ আছে, সেগুলো শেষ করব। এরপর আমি নিজের মতো করে ফিরব।’ তা কীভাবে? ‘আমি সিনেমা প্রযোজনা করব। এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিনেমা প্রযোজনা অবশ্য আমি আগেও করেছিলাম, এটা আর নতুন না। আমার কাছে মনে হয়, ভালো গল্পের ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলে বেশি ভালো লাগবে।’ বললেন পপি।
কথা প্রসঙ্গে পপি জানালেন, অভিনয়ের পাশাপাশি একটা সময়ে এসে তিনি ছবি প্রযোজনাও করেছিলেন। পপি প্রযোজিত ছবিটি পরিচালনা করেন মনোয়ার খোকন। জানালেন, এই ছবির প্রযোজনা করতে সেই সময়ে ২০ লাখ লোকসান গুনেছিলেন। পপির মতে, টিমের অসহযোগিতার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তিনি। বললেন, ‘দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ফিল্মের লাইনটা আমার পুরোপুরি জানা। আশা করি, এখন প্রযোজনা করলে ভালো করব। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর অভিনয়ের শুরুর দিক থেকে প্রযোজনার দিকে আমার আগ্রহটা ছিল বেশি। “কিডন্যাপ” ছাড়া “জীবন মানেই যুদ্ধ”সহ আরও দুটি ছবির প্রযোজনা করেছি। তাই সিনেমায় ফিরব যখন, প্রযোজক হয়েই ফেরার ইচ্ছা।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে পপি সবার বড়। তাঁর বাবা আমির হোসেন পেশায় একজন ঠিকাদার। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। তাঁর জন্ম খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায়। তিনি যখন খুলনার একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন লাক্স–আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতা চলছিল। পত্রিকায় এই খবর দেখে তাঁর মা পপির ছবি পাঠান। এরপর মায়ের ইচ্ছায় পপি ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
কিশোরী পপি সবাইকে অবাক করে লাক্স–আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। এর মধ্যে শেষ হয় স্কুলজীবন। এরপর মাকে সঙ্গে করে পপি চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। দারোগার মেয়ে পপির মা মেয়েকে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এর মধ্যে পরিচয় হয় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই পপির সিনেমাযাত্রা শুরু। প্রথম সিনেমা ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’। নায়ক শাকিল খান। তবে এই ছবিতে প্রথম অভিনয় করলেও পপিকে মানুষ চেনে ‘কুলি’ সিনেমা দিয়ে। তাঁর নায়ক ছিলেন ওমর সানী, পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর।
ব্যবসাসফল ‘কুলি’ সিনেমার জনপ্রিয়তার পর পপিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প বয়সেই পপি বিরাট তারকাখ্যাতি পেয়ে যান। হাতে আসতে থাকে একের পর এক সিনেমা। দিনরাত অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। যে কারণে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারলেও উচ্চশিক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পপির ভীষণ আক্ষেপ, লেখাপড়াটা যদি শেষ করতে পারতেন, তাহলে আর আফসোস থাকত না এই জীবনে।