১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এখনো সমালোচিত জামায়াতে ইসলামী। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা স্বাধীন বাংলাদেশের বিষয়ে কখনো স্বস্তিবোধ করেনি। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই দলটির নেতারা বরাবরই উত্তর দিতে অস্বস্তিবোধ করেন। তাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে বাংলাদেশে ভারতের আক্রমণ চায় জামায়াত।
ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজেদের প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণ করতে চান দলটির নেতারা। এজন্য তাদের ৫০ লাখ কর্মীকে প্রস্তুত করা হয়েছে, পরিকল্পনা করা হয়েছে যুদ্ধের রণকৌশলও। সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে এখন বাংলাদেশে ভারতের আক্রমণের জন্য দোয়া করছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েব আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে (স্থানীয় সময়) বাংলাদেশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের (কোবা) উদ্যোগে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন। গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, দেশের স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস হবে না। আমাদের কমপক্ষে ৫০ লাখ যুবক ভারতের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ করবে।
তিনি বলেন, অতীতে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনায় বলা হয়েছে জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। আমি দোয়া করতেছি, এরা (ভারত) যেন ঢুকে পড়ে। ভারত ঢুকলেই (যুদ্ধের জন্য) আমাদের সেই বদনাম যাবে, যা ১৯৭১ সালে চাপানো হয়েছিল। তখন আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার একটা সুযোগ পাব।
জামায়াত নেতা বলেন, যদি প্রতিবেশী কারো আগ্রাসন ঘটে, পাশের দেশের লোক ঢুকলে আওয়ামী লীগ কখনো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তো করবেই না বরং সহযোগিতা করবে।’ আরেক বড় দল তারা যুদ্ধ করবে না, আবার যুদ্ধ করার মতো তারা সংগঠিতও নয়। তখন যুদ্ধ করলে সংগঠিত শক্তি হিসেবে জামায়াতই সামনের সারিতে থাকবে, তাহলে ভারত আক্রমণ করলে এবং যুদ্ধ করলে সংগঠিত শক্তি হলাম আমরা (আওয়ামী লীগ যুদ্ধ করবে না, আরেকটি বড় দল সংগঠিত নয়)। তখন আমরা হবো খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা।
তার এই বক্তব্যে যুদ্ধেও কৌশলগত দিকনির্দেশের ছোয়াও ছিল। তিনি বলেন, কমপক্ষে ৫০ লাখ যুবক তো ভারতের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে আসবে। তাদের দুই ভাগ করে দেব। এক ভাগ গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেবে, যারা ঘোড়া নিয়ে অগ্রসর হবে, ঘোড়া থেকে নামলেই লাঠি দিয়ে বাড়ি। বাকিরা বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।’ পুরো অঞ্চলেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবে। রাসূল (সা.)-এর গাজওয়া সম্পর্কিত হাদিসের বাস্তবায়ন তখন মহাপরিকল্পনা হয়ে দাঁড়াবে।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আবু তাহের উপস্থিত জামায়াত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভারত ঢুকলে ভালো না খারাপ? এ সময় তেমন কোন সাড়া না পেলে তিনি বলেন, ভালো বলেন, ভালো বলেন। এ সময় ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের কমপক্ষে ৫০ লাখ যুবক ভারতের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ করবে।
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলের বেশিরভাগ সময়ই নিষ্ক্রিয় বা গুপ্ত (আওয়ামী লীগের সাথে মিশে) অবস্থায় রাজনীতি চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দলটি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনসহ সরকারের সবখাতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখন স্বপ্ন দেখছে ক্ষমতা গ্রহণের। এ লক্ষ্যে গড়ে তুলেছে প্রশিক্ষিত বাহিনীও, যার সংখ্যা ৫০ লাখ। যারা যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাকাতের অর্থনৈতিক ব্যবহারের প্রসঙ্গেও জামায়াতে নায়েবে আমির বক্তব্য দেন। তার মতে, অফিসিয়ালি যাকাত আদায় হলে তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। সেই অর্থ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি ও ব্যাবসায়িক উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে প্রবাসীরা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যারা প্রাণ দিয়েছেন, কলমে লড়েছেন, ইতিহাসে তারা সম্মানের আসনে থাকবেন।