প্রতিপক্ষের ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচের লাগাম ধরল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এরপর যেন দানবীয় রূপ ধারণ করলেন মিচেল স্যান্টনার। ১৮ বলে ৫৬ রানের কঠিন সমীকরণ মেলাতে তাণ্ডব চালালেন তিনি। শেষে গিয়ে যদিও পারলেন না তিনি। তাকে আটকে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ‘মূল ম্যাচে’ প্রথম জয় পেল ক্যারিবিয়ানরা।
অকল্যান্ডে বুধবার সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় ৭ রানে। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬৪ রানের পুঁজি গড়ে স্বাগতিকদের ১৫৭ রানে আটকে দিয়েছে তারা।
ইডেন পার্কে ২০ ওভারের ক্রিকেটে এত কম রান করে জিততে পারেনি কোনো দল। ২০১২ সালে ১৬৫ রান করে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই মাঠে ১১৮ রান করে জয় আছে অস্ট্রেলিয়ার, তবে ম্যাচটি বৃষ্টি বাধায় ওভার কমিয়ে খেলা হয়েছিল।
নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে ১১ টি-টোয়েন্টি খেলে স্রেফ একবারই জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৮ সালের ওই ম্যাচটি টাই হয়েছিল, পরে সুপার ওভারে জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা।
বাকি ১০ ম্যাচের আরেকটিও টাই হয়, কিন্তু সেটায় সুপার ওভার খেলা হয়নি। আর দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
শেই হোপের ৩ ছক্কা ও ৪টি চারে ৫৩ রানের ইনিংসে লড়ার মতো সংগ্রহ পায় ক্যারিবিয়ান। রোস্টন চেইস ২৮ ও রভম্যান পাওয়েল ৩৩ রান করে রাখেন অবদান। চেইস পরে ৩ শিকার ধরে জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
রান তাড়ায় ২ উইকেটে ৭০ রান থেকে ১০৭ রানে নবম উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউ জিল্যান্ড। শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের আশা দেখানো স্যান্টনার ২ ছক্কা ও ৮ চারে ২৮ বলে ৫৫ রান করে থাকেন অপরাজিত। তাদের আর কেউ ৩০ রানও করতে পারেননি।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ষষ্ঠ বলে ফিরে যান ব্র্যান্ডন কিংস। পাওয়ার প্লেতে বিদায় নেন আরেক ওপেনার আলিক আথানেজও। সপ্তম ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন আকিম ওগিস।
৪৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন হোপ ও চেইস। ৩৮ বলে ফিফটি করা হোপকে বোল্ড করে ৫৪ রানের জুটি ভাঙেন জ্যাকারি ফোকস।
এরপর পাওয়েল ও চেইস মিলে দলের রান নিয়ে যান দেড়শর কাছে। চেইসের স্টাম্প ভেঙে ৫১ রানের বন্ধনে ফাটল ধরান জ্যাকব ডাফি। ১৯তম ওভারে পাওয়েলকে কট বিহাইন্ড করেন ফোকস।
রান তাড়ায় কিউইদের শুরুটা খারাপ হয়নি। ১ উইকেটে ৪৮ রান নিয় পাওয়ার প্লে শেষ করে তারা। পরে পথ হারায় দলটি। দশম ওভার থেকে শুরু হয় তাদের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল।
চেইস ও সিলসের ছোবলে ৩৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন বড় হারের দুয়ারে স্বাগতিকরা। সেখান থেকে দলকে আশার আলো দেখান স্যান্টনার। দলে ফেরা ম্যাথু ফোর্ডের করা ১৮তম ওভারে ঝড় বইয়ে দেন তিনি। আগের ৩ ওভারে স্রেফ ৯ রান দেওয়া পেসারকে চারটি চার ও একটি ছক্কা মারেন স্যান্টনার।
পরের ওভারে জেসন হোল্ডারকে মারেন টানা তিনটি চার। শেষ ওভারে ২০ রানের সমীকরণে প্রথম দুই বলে কোনো রান নিতে পারেননি স্যান্টনার। তৃতীয় বলে ছক্কায় ওড়ান রোমারিও শেফার্ডকে। বাংলাদেশে দুর্দান্ত বোলিং করে যাওয়া শেফার্ড পরের তিনটি ডেলিভারিতে দেন ৬ রান।
একই মাঠে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৪/৬ (কিং ৩, আথানেজ ১৬, হোপ ৫৩, ওগিস ২, চেইস ২৮, পাওয়েল ৩৩, হোল্ডার ৫, শেফার্ড ৯; ডাফি ৪-০-১৯-২, জেমিসন ৪-০-৩০-১, ফোকস ৪-০-৩৫-২, নিশাম ৩-০-২৩-১, স্যান্টনার ৪-০-৪০-০, রাভিন্দ্রা ১-০-১১-০)
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৭/৯ (রবিনসন ২৭, কনওয়ে ১৩, রাভিন্দ্রা ২১, চ্যাপম্যান ৭, মিচেল ১৩, ব্রেসওয়েল ১, নিশাম ১১, স্যান্টনার ৫৫, ফোকস ১, জেমিসন ২, ডাফি ১; সিলস ৪-০-৩২-৩, ফোর্ড ৪-০-৩২-১, হোল্ডার ৪-০-৩৫-০, শেফার্ড ৩-০-২৬-১, চেইস ৪-০-২৪-২, আকিল ১-০-৪-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোস্টন চেইস
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ









