ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ইসলামে শরীরচর্চা

  • আপডেট সময় : ০৩:৪৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

শারীরিক পরিশ্রম, সাঁতার ও নানা ধরনের কুস্তিকৌশল রপ্ত করা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে

শারীরিক পরিশ্রম, সাঁতার ও নানা ধরনের কুস্তিকৌশল রপ্ত করা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। নবী (সা.) ও সাহাবিদের জীবনেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। শরীরচর্চার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি আলোচনা করা হলো—

(১) শরীরচর্চায় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি : ইসলামে সুস্থতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, হালাল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সুস্থতার প্রয়োজনে শরীরচর্চার অনুমোদন রয়েছে। তবে শরীরচর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, এর জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করা, মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করা, শরীরচর্চা করতে গিয়ে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত পরিত্যাগ করা, কোনো হারাম কাজ বা পদ্ধতি গ্রহণ করা কোনোভাবেই ইসলাম সম্মত নয়; বরং দৈনন্দিন স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কিছুটা শরীরচর্চা করা যেতে পারে।

সেই সঙ্গে নিজের কাজ নিজে করা, বাড়ির কাজে সাহায্য করা, জায়গাজমি থাকলে আবাদ-ফসল করা, পুঁজি থাকলে বিনিয়োগ করা—এককথায় অলসতা ছেড়ে পরিশ্রম করার অভ্যাস গড়ে তোলা হলে অনেকাংশে শরীরচর্চা হয়ে যায়। সর্বোপরি যথাযথভাবে শারীরিক ইবাদত তথা নামাজ-বন্দেগি করলে পরোক্ষভাবে শরীরচর্চাও হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, শরীরচর্চা যেন ইবাদতের অন্তরায় না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না; তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৭)

(২) ইবাদতের প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি : শরীরচর্চার অন্যতম মাধ্যম হলো—প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা। বিশেষ কিছু হাঁটাহাঁটি ইসলামে ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্রুত হাঁটতেন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে এবং উভয় ঈদে ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ইসলামের অন্যতম নির্দেশনা।

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য নিয়মিত মসজিদে যাওয়া হলে প্রতিদিনের হাঁটার কাজ হয়ে যায়। বাড়ি থেকে মসজিদ তিন মিনিটের পথ হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদে যাওয়া-আসা মিলে ৩০ মিনিট হয়। নামাজে হেঁটে যাওয়া বিষয়ে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে অজু করে কেবল নামাজের উদ্দেশেই মসজিদ অভিমুখে বের হয় তার মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতি ধাপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি পাপ মোচন হয়।’ (বুখারি,
হাদিস : ২০১৩; মুসলিম, হাদিস : ১৫৩৮)

আউস ইবন আউস আস-সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করে, এরপর তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয় এবং আগেভাগে কোনো কিছুতে আরোহণ না করে পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে, মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে আর অনর্থক কথা ও কাজ না করে, তার প্রতি কদমে পূর্ণ এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব দেওয়া হয়।

’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪৯৬;  আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সুন্নত হলো ঈদগাহের দিকে হেঁটে যাওয়া এবং ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৩০)

(৩) দৌড়ানো : শরীরচর্চার ক্ষেত্রে ব্যায়াম হিসেবে দৌড়ানো খুবই উপকারী। শরীর ঝরঝরে রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানো ও হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে দৌড়ানো দারুণ সহায়ক। হজ ও ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ানো ইবাদত। পবিত্র কোরআনে প্রসঙ্গত দৌড় প্রতিযোগিতার আলোচনা বর্ণিত হয়েছে। ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করে ঘরে ফিরে এসে পিতার কাছে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেছিল, ‘আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। এরপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে।’ এখানে তারা দৌড় প্রতিযোগিতার কথা বলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা [ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা] বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের কাছে রেখেছিলাম। এরপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু আপনি তো আমাদের বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে বলেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে এগিয়ে গেলাম। (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)

(৪) সাঁতার : সবচেয়ে জনপ্রিয় শরীরচর্চার মধ্যে একটি হচ্ছে সাঁতার। সাঁতারে শরীরের একাধিক পেশি একসঙ্গে কাজ করে। ফলে পুরো শরীরের ব্যায়াম হয়। ইসলামে এর অনুমোদন রয়েছে। জাবির ইবন আবদুল্লাহ ও জাবির ইবন উমাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁদের একজন অপরজনকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক সেই জিনিস (খেলা), যা আল্লাহর স্মরণের পর্যায়ভুক্ত নয়, তা অসার ভ্রান্তি ও বাতিল। অবশ্য চারটি কর্ম এরূপ নয়—হাতের নিশানা ঠিক করার উদ্দেশ্যে তীর খেলা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হাসি-কৌতুক করা এবং সাঁতার শেখা। (সুনানে কুবরা লিল-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪০)

(৫) কুস্তি ও শারীরিক কসরত :  ইসলামের সোনালি যুগে প্রচলিত একটি খেলা ছিল কুস্তি বা মল্লযুদ্ধ। দ্বিন প্রচারের স্বার্থে নবী (সা.) নিজেও একবার মল্লযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মক্কার একজন বিখ্যাত মল্লযোদ্ধা ছিল রুকানা ইবন ইয়াজিদ। সে ছিল খুবই বলিষ্ঠ। নবী (সা.) তাঁকে দ্বিনের দাওয়াত দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, আমি যদি মল্লযুদ্ধে তোমাকে পরাজিত করি, তবে কি তুমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে? রুকানা তাতে সম্মত হয়। অতঃপর মহানবী (সা.) তাকে মল্লযুদ্ধে পরাজিত করেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৯০)

(৬) মুমিনদের দৈহিক ও সামরিক শক্তির অনুশীলন : পবিত্র কোরআনে মুমিনদের দৈহিক ও সামরিক শক্তির অনুশীলন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে শরীরচর্চা ও সমরবিদ্যা অনুশীলনের বিষয়টিও সামনে আসে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুত রাখো শক্তি ও অশ্ব বাহিনী, তা দিয়ে তোমরা ভীতসন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকে, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদের জানেন। আর আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬০)

পরিশেষে বলা যায়, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ঠিক রেখে, ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে এবং ইসলামের কোনো বিধান লঙ্ঘন না করে প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা করা যেতেই পারে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ইসলামে শরীরচর্চা

আপডেট সময় : ০৩:৪৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

শারীরিক পরিশ্রম, সাঁতার ও নানা ধরনের কুস্তিকৌশল রপ্ত করা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। নবী (সা.) ও সাহাবিদের জীবনেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। শরীরচর্চার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি আলোচনা করা হলো—

(১) শরীরচর্চায় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি : ইসলামে সুস্থতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, হালাল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সুস্থতার প্রয়োজনে শরীরচর্চার অনুমোদন রয়েছে। তবে শরীরচর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, এর জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করা, মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করা, শরীরচর্চা করতে গিয়ে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত পরিত্যাগ করা, কোনো হারাম কাজ বা পদ্ধতি গ্রহণ করা কোনোভাবেই ইসলাম সম্মত নয়; বরং দৈনন্দিন স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কিছুটা শরীরচর্চা করা যেতে পারে।

সেই সঙ্গে নিজের কাজ নিজে করা, বাড়ির কাজে সাহায্য করা, জায়গাজমি থাকলে আবাদ-ফসল করা, পুঁজি থাকলে বিনিয়োগ করা—এককথায় অলসতা ছেড়ে পরিশ্রম করার অভ্যাস গড়ে তোলা হলে অনেকাংশে শরীরচর্চা হয়ে যায়। সর্বোপরি যথাযথভাবে শারীরিক ইবাদত তথা নামাজ-বন্দেগি করলে পরোক্ষভাবে শরীরচর্চাও হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, শরীরচর্চা যেন ইবাদতের অন্তরায় না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না; তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৭)

(২) ইবাদতের প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি : শরীরচর্চার অন্যতম মাধ্যম হলো—প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা। বিশেষ কিছু হাঁটাহাঁটি ইসলামে ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্রুত হাঁটতেন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে এবং উভয় ঈদে ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ইসলামের অন্যতম নির্দেশনা।

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য নিয়মিত মসজিদে যাওয়া হলে প্রতিদিনের হাঁটার কাজ হয়ে যায়। বাড়ি থেকে মসজিদ তিন মিনিটের পথ হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদে যাওয়া-আসা মিলে ৩০ মিনিট হয়। নামাজে হেঁটে যাওয়া বিষয়ে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে অজু করে কেবল নামাজের উদ্দেশেই মসজিদ অভিমুখে বের হয় তার মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতি ধাপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি পাপ মোচন হয়।’ (বুখারি,
হাদিস : ২০১৩; মুসলিম, হাদিস : ১৫৩৮)

আউস ইবন আউস আস-সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালোভাবে গোসল করে, এরপর তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয় এবং আগেভাগে কোনো কিছুতে আরোহণ না করে পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসে, মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে আর অনর্থক কথা ও কাজ না করে, তার প্রতি কদমে পূর্ণ এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব দেওয়া হয়।

’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪৯৬;  আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সুন্নত হলো ঈদগাহের দিকে হেঁটে যাওয়া এবং ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৩০)

(৩) দৌড়ানো : শরীরচর্চার ক্ষেত্রে ব্যায়াম হিসেবে দৌড়ানো খুবই উপকারী। শরীর ঝরঝরে রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানো ও হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে দৌড়ানো দারুণ সহায়ক। হজ ও ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ানো ইবাদত। পবিত্র কোরআনে প্রসঙ্গত দৌড় প্রতিযোগিতার আলোচনা বর্ণিত হয়েছে। ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করে ঘরে ফিরে এসে পিতার কাছে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলেছিল, ‘আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। এরপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে।’ এখানে তারা দৌড় প্রতিযোগিতার কথা বলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা [ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা] বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের কাছে রেখেছিলাম। এরপর নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু আপনি তো আমাদের বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে বলেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে এগিয়ে গেলাম। (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)

(৪) সাঁতার : সবচেয়ে জনপ্রিয় শরীরচর্চার মধ্যে একটি হচ্ছে সাঁতার। সাঁতারে শরীরের একাধিক পেশি একসঙ্গে কাজ করে। ফলে পুরো শরীরের ব্যায়াম হয়। ইসলামে এর অনুমোদন রয়েছে। জাবির ইবন আবদুল্লাহ ও জাবির ইবন উমাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁদের একজন অপরজনকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক সেই জিনিস (খেলা), যা আল্লাহর স্মরণের পর্যায়ভুক্ত নয়, তা অসার ভ্রান্তি ও বাতিল। অবশ্য চারটি কর্ম এরূপ নয়—হাতের নিশানা ঠিক করার উদ্দেশ্যে তীর খেলা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হাসি-কৌতুক করা এবং সাঁতার শেখা। (সুনানে কুবরা লিল-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪০)

(৫) কুস্তি ও শারীরিক কসরত :  ইসলামের সোনালি যুগে প্রচলিত একটি খেলা ছিল কুস্তি বা মল্লযুদ্ধ। দ্বিন প্রচারের স্বার্থে নবী (সা.) নিজেও একবার মল্লযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মক্কার একজন বিখ্যাত মল্লযোদ্ধা ছিল রুকানা ইবন ইয়াজিদ। সে ছিল খুবই বলিষ্ঠ। নবী (সা.) তাঁকে দ্বিনের দাওয়াত দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, আমি যদি মল্লযুদ্ধে তোমাকে পরাজিত করি, তবে কি তুমি আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে? রুকানা তাতে সম্মত হয়। অতঃপর মহানবী (সা.) তাকে মল্লযুদ্ধে পরাজিত করেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৯০)

(৬) মুমিনদের দৈহিক ও সামরিক শক্তির অনুশীলন : পবিত্র কোরআনে মুমিনদের দৈহিক ও সামরিক শক্তির অনুশীলন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে শরীরচর্চা ও সমরবিদ্যা অনুশীলনের বিষয়টিও সামনে আসে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তাদের মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য প্রস্তুত রাখো শক্তি ও অশ্ব বাহিনী, তা দিয়ে তোমরা ভীতসন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকে, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদের জানেন। আর আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬০)

পরিশেষে বলা যায়, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ঠিক রেখে, ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে এবং ইসলামের কোনো বিধান লঙ্ঘন না করে প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা করা যেতেই পারে।