ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
লাওসের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দুই বছর পর এক ম্যাচে জোড়া গোল নেইমারের গণতন্ত্রের পথকে সুগম করার উদ্যোগে সরকারকে তারেক রহমানের ধন্যবাদ নেতানিয়াহুর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের কাছে ইসরায়েল এখন বর্জনীয় রাষ্ট্র: বেনেট ভারতের যেকোনো জায়গায় পাকিস্তান আঘাত হানতে সক্ষম: আহমেদ শরীফ হিজবুল্লাহর হুঁশিয়ারি, ‘এক ঘণ্টার মধ্যেই ধ্বংস হতে পারে ইসরায়েলের নিরাপত্তা’ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ১৫ দিন পর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে পাঠদান শুরু ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণা গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে : মির্জা ফখরুল Malaysia Airlines Champions Elevated Journeys with ‘Time for Premium Escapades’ প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাল বিএনপি

রায়হানের ফলের বাগান এখন ১৬টি, বছরে আয় ৫০ লাখ টাকা

  • আপডেট সময় : ১২:১০:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

২০০৪-০৫ সালের দিকে নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক আম চাষ শুরু হয়নি। তখন উঁচু বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত ওই সব এলাকার দিগন্তবিস্তৃত মাঠগুলোয় ধান, গম ও শর্ষের আবাদ হতো। সে সময় পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া রায়হান আলম (৪২) ফসলি জমিতে আমবাগান করার সিদ্ধান্ত নেন।

ধান ও গরু বেচে পাওয়া এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজেদের আট বিঘা জমিজুড়ে আমের চারা রোপণ করেন। দুই বছরে আম বিক্রি করে আয় করেন তিন লাখ টাকা। এভাবে প্রতি বছর পুঁজি বাড়তে থাকলে রায়হান তাঁর বাগানের পরিমাণও বাড়াতে থাকেন। এখন প্রায় ২০০ বিঘা জমিজুড়ে রায়হানের ছোট-বড় ১৬টি ফলদ বাগান। বাগান থেকে বছরে তাঁর আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।

রায়হানের গ্রামের বাড়ি সাপাহার উপজেলার দোয়াশ গ্রামে। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই বড়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকে নিজের সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। এলাকার অনেক তরুণ তাঁকে অনুসরণ করে তৈরি করেছেন আমের বাগান। তাঁরাও দেখছেন সাফল্যের মুখ। নিজ গ্রাম দোয়াশ ছাড়াও ২০০ বিঘা জমিজুড়ে গড়ে তোলা ফলদ বাগানগুলো সাপাহার, পত্নীতলা ও পোরশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আছে। আম ছাড়াও ড্রাগন ও পেয়ারা চাষ করেন রায়হান। তাঁর বাগানে নিয়মিত ২০–২৫ জন মানুষ কাজ করেন।

সফল এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, ২০০৫ সালে নিজেদের ফসলি জমিতে আমের চারা রোপণ করার দুই বছর পর বাগানের আম বিক্রি করে তাঁর তিন লাখ টাকা আয় হয়। কৃষিকাজের পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন রায়হান। ২০১২ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। নিজের বাগান থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ২০১৩ সালে সাপাহার উপজেলার হরিকুর ও জামালপুর এলাকায় ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আরও দুটি বাগান গড়ে তোলেন। প্রায় ২০০ বিঘা জমিজুড়ে এখন ১৬টি ফলদ বাগানের মালিক তিনি। তাঁর বাগানে আম্রপালি, বারি-৪ ও গৌড়মতি ছাড়াও ব্যানানা ম্যাঙ্গো, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই, ব্রুনাই কিং, কিউজাইসহ দেশি-বিদেশি ২০-২৫ জাতের আম আছে।

রায়হান আলম বলেন, ‘পোরশার বন্ধুপাড়া এলাকায় আছে মিশ্র ফলবাগান। এ বাগানে আমের পাশাপাশি কিছু ড্রাগন ও পেয়ারাগাছ আছে। গত বছর আম, ড্রাগন ও পেয়ারা বিক্রি করেছিলাম প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার। শ্রমিক খরচ, কীটনাশক ও সেচের খরচ বাদ দিয়ে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়েছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ৬০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।’

নতুন যাঁরা আম চাষের জগতে আসতে চান, তাঁদের জন্য তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তার পরামর্শ— বাগানে শুধু এক জাতের আম চাষ না করে একাধিক জাতের আমগাছ লাগানো বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকে, এমন বিষয় মাথায় রেখে বাগানে একাধিক জাতের আমগাছ লাগানো উচিত। এক জাতের আমগাছ লাগালে একই সময়ে পরিপক্ব হবে। তখন বাজারে ধস নামলে চাষিকে লোকসানে পড়তে হয়। তাই আমচাষিদের উচিত বাগানে একাধিক জাতের আমের চাষ করা। যাতে এপ্রিল থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আম সরবরাহ করা যায়।  

পোরশার বড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার অধিকাংশই আম্রপালি ও ল্যাংড়া জাতের আমের বাগান। রায়হান ভাই প্রথম নাবি জাতের আম বারি-৪ ও গৌড়মতি আমের চাষ শুরু করেন। মৌসুমের শেষ দিকে এসব আম বাজারে আসায় অন্য আমের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। শীতকালেও তাঁর বাগানে আম পাওয়া যায়। আমি নিজেও এখন আমার বাগানে একাধিক জাতের আম চাষ করি। এতে বেশি লাভবান হওয়া যায়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত দুই দশক ধরেই নওগাঁর উঁচু বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে ধান চাষ বাদ দিয়ে আমবাগান করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই পেশায় অনেক শিক্ষিত তরুণ আসছেন। আমের বাগান করে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন জেলার এমন কয়েকজন কৃষকের মধ্যে সাপাহারের রায়হান আলম একজন। গতানুগতিক ধারায় বাগানে একই জাতের আমের চাষ না করে তিনি একাধিক জাতের আমের চাষ করেন। এতে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। অন্যদেরও উচিত তাঁর মতো বাগানে ভিন্ন ভিন্ন জাতের আমের চাষ করা। এতে তাঁরাও লাভবান হতে পারবেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রায়হানের ফলের বাগান এখন ১৬টি, বছরে আয় ৫০ লাখ টাকা

আপডেট সময় : ১২:১০:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

২০০৪-০৫ সালের দিকে নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক আম চাষ শুরু হয়নি। তখন উঁচু বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত ওই সব এলাকার দিগন্তবিস্তৃত মাঠগুলোয় ধান, গম ও শর্ষের আবাদ হতো। সে সময় পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া রায়হান আলম (৪২) ফসলি জমিতে আমবাগান করার সিদ্ধান্ত নেন।

ধান ও গরু বেচে পাওয়া এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজেদের আট বিঘা জমিজুড়ে আমের চারা রোপণ করেন। দুই বছরে আম বিক্রি করে আয় করেন তিন লাখ টাকা। এভাবে প্রতি বছর পুঁজি বাড়তে থাকলে রায়হান তাঁর বাগানের পরিমাণও বাড়াতে থাকেন। এখন প্রায় ২০০ বিঘা জমিজুড়ে রায়হানের ছোট-বড় ১৬টি ফলদ বাগান। বাগান থেকে বছরে তাঁর আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।

রায়হানের গ্রামের বাড়ি সাপাহার উপজেলার দোয়াশ গ্রামে। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই বড়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকে নিজের সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। এলাকার অনেক তরুণ তাঁকে অনুসরণ করে তৈরি করেছেন আমের বাগান। তাঁরাও দেখছেন সাফল্যের মুখ। নিজ গ্রাম দোয়াশ ছাড়াও ২০০ বিঘা জমিজুড়ে গড়ে তোলা ফলদ বাগানগুলো সাপাহার, পত্নীতলা ও পোরশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আছে। আম ছাড়াও ড্রাগন ও পেয়ারা চাষ করেন রায়হান। তাঁর বাগানে নিয়মিত ২০–২৫ জন মানুষ কাজ করেন।

সফল এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, ২০০৫ সালে নিজেদের ফসলি জমিতে আমের চারা রোপণ করার দুই বছর পর বাগানের আম বিক্রি করে তাঁর তিন লাখ টাকা আয় হয়। কৃষিকাজের পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন রায়হান। ২০১২ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। নিজের বাগান থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ২০১৩ সালে সাপাহার উপজেলার হরিকুর ও জামালপুর এলাকায় ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আরও দুটি বাগান গড়ে তোলেন। প্রায় ২০০ বিঘা জমিজুড়ে এখন ১৬টি ফলদ বাগানের মালিক তিনি। তাঁর বাগানে আম্রপালি, বারি-৪ ও গৌড়মতি ছাড়াও ব্যানানা ম্যাঙ্গো, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই, ব্রুনাই কিং, কিউজাইসহ দেশি-বিদেশি ২০-২৫ জাতের আম আছে।

রায়হান আলম বলেন, ‘পোরশার বন্ধুপাড়া এলাকায় আছে মিশ্র ফলবাগান। এ বাগানে আমের পাশাপাশি কিছু ড্রাগন ও পেয়ারাগাছ আছে। গত বছর আম, ড্রাগন ও পেয়ারা বিক্রি করেছিলাম প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার। শ্রমিক খরচ, কীটনাশক ও সেচের খরচ বাদ দিয়ে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়েছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ৬০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।’

নতুন যাঁরা আম চাষের জগতে আসতে চান, তাঁদের জন্য তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তার পরামর্শ— বাগানে শুধু এক জাতের আম চাষ না করে একাধিক জাতের আমগাছ লাগানো বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকে, এমন বিষয় মাথায় রেখে বাগানে একাধিক জাতের আমগাছ লাগানো উচিত। এক জাতের আমগাছ লাগালে একই সময়ে পরিপক্ব হবে। তখন বাজারে ধস নামলে চাষিকে লোকসানে পড়তে হয়। তাই আমচাষিদের উচিত বাগানে একাধিক জাতের আমের চাষ করা। যাতে এপ্রিল থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আম সরবরাহ করা যায়।  

পোরশার বড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার অধিকাংশই আম্রপালি ও ল্যাংড়া জাতের আমের বাগান। রায়হান ভাই প্রথম নাবি জাতের আম বারি-৪ ও গৌড়মতি আমের চাষ শুরু করেন। মৌসুমের শেষ দিকে এসব আম বাজারে আসায় অন্য আমের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। শীতকালেও তাঁর বাগানে আম পাওয়া যায়। আমি নিজেও এখন আমার বাগানে একাধিক জাতের আম চাষ করি। এতে বেশি লাভবান হওয়া যায়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত দুই দশক ধরেই নওগাঁর উঁচু বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে ধান চাষ বাদ দিয়ে আমবাগান করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই পেশায় অনেক শিক্ষিত তরুণ আসছেন। আমের বাগান করে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন জেলার এমন কয়েকজন কৃষকের মধ্যে সাপাহারের রায়হান আলম একজন। গতানুগতিক ধারায় বাগানে একই জাতের আমের চাষ না করে তিনি একাধিক জাতের আমের চাষ করেন। এতে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। অন্যদেরও উচিত তাঁর মতো বাগানে ভিন্ন ভিন্ন জাতের আমের চাষ করা। এতে তাঁরাও লাভবান হতে পারবেন।