ভারতের যেকোনো জায়গায় পাকিস্তান আঘাত হানতে সক্ষম: আহমেদ শরীফ

- আপডেট সময় : ০১:১৪:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪ বার পড়া হয়েছে
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ভারত যদি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো কোনো সামরিক অভিযান আবার চালায়, তবে পাকিস্তান ‘ভারতের গভীরে, বিশেষ করে পূর্ব দিক থেকে’ আঘাত হানবে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টে রোববার (৩ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য উঠে আসে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সম্ভাব্য জবাব কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী বলেন, ‘তাদের বুঝতে হবে, ভারতের যেকোনো জায়গায় পাকিস্তান আঘাত হানতে সক্ষম।’
এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন পেহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত ৭ মে ভারতের সামরিক বাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। ওই অভিযান ছিল ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ঘটে যাওয়া গণহত্যার প্রতিশোধ, যেখানে লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীরা ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ২৫ জন ভারতীয়কে হত্যা করে।
দ্য প্রিন্টের খবরে জানা যায়, অভিযানের দিন অর্থাৎ ৭ মে ভারতীয় ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই পাকিস্তানকে বার্তা দিলে পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করে এবং ‘তীব্র প্রতিক্রিয়া আসন্ন’ বলে জানিয়ে দেয়। তবে ১০ মে পাকিস্তান নিজেই ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়।
ভারতের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছে, দেশটির ভূখণ্ডে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হলে তার শক্তিশালী ও পরিকল্পিত জবাব দেওয়া হবে। এই জবাব নির্দিষ্ট সময় ও কৌশলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে এবং সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণশিবিরসহ সংশ্লিষ্ট সব স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে।
এছাড়াও ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এমনকি যারা হামলা চালায় এবং যারা রাষ্ট্র হিসেবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে—তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হবে না।
আইএসপিআরের প্রধান আহমেদ শরীফ চৌধুরীর এই বক্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের শক্তি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এসেছে বলে জানিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট।
আহমেদ শরীফ জানান, পহেলগাম হামলার ছয় দিন আগে, ১৬ এপ্রিল, সেনাপ্রধান মুনির যে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা ছিল তার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘সেদিন তিনি যা বলেছিলেন, তা-ই তিনি বিশ্বাস করেন এবং প্রয়োজনে তার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।’
ওই বক্তৃতায় মুনির পুনরায় ‘দুই জাতি তত্ত্ব’-এর কথা উল্লেখ করে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জগুলার ভেইন’ (জীবনের মূল শিরা) হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি জাতি, এক নই। আমাদের পূর্বপুরুষরা বিশ্বাস করতেন, হিন্দুদের সঙ্গে আমাদের জীবনধারা, ধর্ম, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও চিন্তাধারা—সবই আলাদা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের কোনো শক্তিই কাশ্মীরকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে পারবে না।’
দ্য ইকোনমিস্টের সঙ্গে আলোচনায় চৌধুরী এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন যে, মুনির রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান বা রাষ্ট্রপতি হতে চান। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ধারণা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’ বরং সেনাপ্রধানকে তিনি একজন ‘পশ্চিমা চিন্তাধারায় অভ্যস্ত’ ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সক্রিয় জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর ‘কঠোর বিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করেন।