ঢাকা ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাল বিএনপি শিবিরের এই আয়োজনের দায় ভিসি ও প্রক্টর এড়াতে পারেন না: নাছির জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে, পড়ুন বিস্তারিত ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই নির্বাচন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদ্‌যাপন’ অনুষ্ঠান শুরু অধ্যাদেশের দাবিতে বুধবার রাস্তায় নামছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন দক্ষিণপন্থি অংশ বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করছে ইলেকশনটা যেন না হয়: তাসনিম খলিল ট্রাম্প কে পাল্টা ভারতের হুশিয়ারি ‘পাত্তা’ দিচ্ছে না ভারত ৫ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিন : তারেক রহমান

ভোটের হালচাল: নওগাঁ-৪ (মান্দা)

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৫:১৬:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩১৫ বার পড়া হয়েছে

নওগাঁ-৪ (মান্দা)

একক উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ৪৯ নাম্বার আসন, নওগাঁ-৪ (মান্দা)। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ আসনে ভোটের হিসাব-নিকাশে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলছে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৬ সালের সম্ভাব্য নির্বাচন অনেকটাই ব্যতিক্রম হতে চলেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই এ আসনে আওয়ামী লীগপন্থী ভোটারের হার প্রায় ৪০ শতাংশের মতো স্থিতিশীল ছিল। বাকি ৬০ শতাংশের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী হিসেবে বিবেচিত। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় তৈরি হবে জটিল সমীকরণ।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী মরহুম নাসির উদ্দিন জিহাদি প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় বিএনপির প্রার্থী আফাজ উদ্দিন মণ্ডল পান মাত্র ১০ শতাংশ ভোট। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে মান্দা উপজেলা বিএনপিতে তরুণ নেতৃত্বের উত্থান ঘটে। ডা. টিপু, ফিরোজ প্রভাষক, প্রয়াত আলম চৌধুরী, বেলাল চেয়ারম্যান, ফরহাদ চকদার, মকলেছুর রহমান মকে, মনছুর মৃধা প্রমুখের নেতৃত্বে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ায়। ফলস্বরূপ বিএনপির সামসুল আলম প্রামাণিক প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে জামায়াতের নাসির উদ্দিন জিহাদি পান মাত্র ১৫ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগ পান প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট। যদিও নাসির উদ্দিন জিহাদি সুনাম ও সততার ধারে কাছে কেউ ছিলেন না। তবে বিএনপি সরকারে থাকায় তিনি বিরোধী দলীয় এমপি হিসেবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে না পারা এবং বিএনপি’র নেতৃত্বে তরুণদের আগমন, জিহাদি সাহেবের পরাজয়ের একটি কারণ হিসেবে ধরা হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হিসেবে সামসুল আলম প্রামাণিক ধানের শীষ প্রতীকে প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে আবারও জয়ী হন। যদিও দলীয় সমর্থনের হিসেবে তার প্রাপ্ত ভোট কাঙ্ক্ষিত ছিল না। কারণ, তৎকালীন পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের সম্মিলিত ভোট হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৬০–৬২ শতাংশ। কিন্তু তিনি পান ৫৫%, বাঁকি ৫-৭% ভোটার সামসুল আলম প্রামানিক থেকে বিমুখ হওয়ার কারণ হতে পারে দুইটি। এক. ১৯৯১-৯৬ সালে তার দল সরকারে না থাকার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূমিকা কম রাখা অথবা ব্যক্তিগত আচার-আচরণে জনগণ অখুশি হওয়া
দুই. জামাতের প্রার্থী না থাকায় জামাতের সাধারণ কর্মী-ভোটারের অনাগ্রহতায় ভোটকেন্দ্রে অনুপস্থিতি।

২০০৮ সালের ১/১১-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী সতন্ত্র প্রার্থী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী সামসুল আলম পান ৪২ শতাংশ ভোট। ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ হিসেবে উঠে আসে- ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মান্দা উপজেলা বিএনপি’র তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জনপ্রিয় নেতা ডা. ইকরামুল বারী টিপুকে বহিষ্কার করায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া এবং জামায়াতের বারবার প্রার্থী না থাকায় জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ কর্মী-ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহীতা। সেই সাথে সারাদেশে বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া এবং ১/১১ সরকারের আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসানোর গোপণ অভিলাষ।

মান্দা আসনটি একক উপজেলা নিয়ে গঠিত হওয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলগুলোও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস দিতে সহায়ক। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. ইকরামুল বারী টিপু ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। একই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের জোট প্রার্থী খোন্দকার আব্দুর রাকিব পান মাত্র ২২ শতাংশ ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরদার জসিম উদ্দিন পান ৩২ শতাংশ। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুর রশিদ ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গামা ৩২%, বিএনপির মকলেছুর রহমান ২১% এবং বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. টিপু ১৩% ভোট পান।

এই আসনে এমপি কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পেছনে প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক দলভিত্তিক ভোটব্যাংক, এবং জাতীয় রাজনীতির গতিধারার সম্মিলিত প্রভাব কাজ করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি থাকলে ভোটের হিসাব-নিকাশ অনেকটা পাল্টে যাবে। সাধারণ আওয়ামী লীগপন্থী ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকলে ফলাফল হবে একরকম, আবার কিছু অংশ ভোট দিলে ফল হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ অবস্থায় যিনি আওয়ামী ঘরানার ভোটারদের নিজের বাক্সে আনতে পারবেন, তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তবে অতিমাত্রায় আওয়ামী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গেলে নিজ দলের আদর্শিক, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাঙন দেখা দিতে পারে।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে বিএনপি বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে শান্তিপ্রিয় মানুষ জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে। ধর্মীয় প্রচারণা, মসজিদভিত্তিক ওয়াজ-নসিহত এবং ভালো কাজে মানুষকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করছে জামায়াত। যার ফলে বিএনপি থেকে জামায়াতের দিকে রাজনৈতিক মাইগ্রেশন বাড়ছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কোণঠাসা হলেও কর্মীরা এখনও ঐক্যবদ্ধ। বিপরীতে বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এবং বিভক্তি রয়েছে চরমে। এ অবস্থায় জামায়াতের জেলা আমীর খোন্দকার আব্দুর রাকিব—যদিও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতা—তবুও দলের বাহিরে সাধারণ জনগণের মাঝে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। তিনি যদি আরও পরিচিত মুখ হতেন, যেমন: স্থানীয় কোনো কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জনপ্রিয় বক্তা বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, যেমন- মাওলানা আমির হামজা, মিজানুর রহমান আজহারী অথবা মধ্যম সারির জাতীয় ইনফ্লুয়েঞ্জার তাহলে জামায়াতের পক্ষে গণভিত্তি তৈরি করা ও এমপি নির্বাচিত করা সহজ হতো।

এ দিক দিয়ে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. টিপু অনেক এগিয়ে। একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিয়মিত মানুষের কাছে থেকেছেন, সেবাদান করেছেন এবং জনসম্পৃক্ততা বজায় রেখেছেন। স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হয়, এই আসনে ইমাজ উদ্দিন (আওয়ামী লীগ) ও ডা. টিপু (বিএনপি)—এই দুইজন ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় ১০–১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট নিজ বাক্সে টানতে পারেন।

বর্তমানে আরও একজন প্রভাবশালী নেতা আব্দুল মতিন বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে রাজনীতি করায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে, যা মফস্বলের রাজনীতিতে তার বড় মূলধন হিসেবে কাজে দিচ্ছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে এমপি পদে নির্বাচিত হওয়া যেকোনো প্রার্থীর জন্যই আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। তবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশিত না হলে জামায়াতের জন্য ভোটের মাঠ হবে তুলনামূলক সহজ।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ভোটের হালচাল: নওগাঁ-৪ (মান্দা)

আপডেট সময় : ০৫:১৬:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

একক উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ৪৯ নাম্বার আসন, নওগাঁ-৪ (মান্দা)। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ আসনে ভোটের হিসাব-নিকাশে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলছে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৬ সালের সম্ভাব্য নির্বাচন অনেকটাই ব্যতিক্রম হতে চলেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই এ আসনে আওয়ামী লীগপন্থী ভোটারের হার প্রায় ৪০ শতাংশের মতো স্থিতিশীল ছিল। বাকি ৬০ শতাংশের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী হিসেবে বিবেচিত। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় তৈরি হবে জটিল সমীকরণ।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী মরহুম নাসির উদ্দিন জিহাদি প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় বিএনপির প্রার্থী আফাজ উদ্দিন মণ্ডল পান মাত্র ১০ শতাংশ ভোট। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে মান্দা উপজেলা বিএনপিতে তরুণ নেতৃত্বের উত্থান ঘটে। ডা. টিপু, ফিরোজ প্রভাষক, প্রয়াত আলম চৌধুরী, বেলাল চেয়ারম্যান, ফরহাদ চকদার, মকলেছুর রহমান মকে, মনছুর মৃধা প্রমুখের নেতৃত্বে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ায়। ফলস্বরূপ বিএনপির সামসুল আলম প্রামাণিক প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে জামায়াতের নাসির উদ্দিন জিহাদি পান মাত্র ১৫ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগ পান প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট। যদিও নাসির উদ্দিন জিহাদি সুনাম ও সততার ধারে কাছে কেউ ছিলেন না। তবে বিএনপি সরকারে থাকায় তিনি বিরোধী দলীয় এমপি হিসেবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে না পারা এবং বিএনপি’র নেতৃত্বে তরুণদের আগমন, জিহাদি সাহেবের পরাজয়ের একটি কারণ হিসেবে ধরা হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হিসেবে সামসুল আলম প্রামাণিক ধানের শীষ প্রতীকে প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে আবারও জয়ী হন। যদিও দলীয় সমর্থনের হিসেবে তার প্রাপ্ত ভোট কাঙ্ক্ষিত ছিল না। কারণ, তৎকালীন পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের সম্মিলিত ভোট হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৬০–৬২ শতাংশ। কিন্তু তিনি পান ৫৫%, বাঁকি ৫-৭% ভোটার সামসুল আলম প্রামানিক থেকে বিমুখ হওয়ার কারণ হতে পারে দুইটি। এক. ১৯৯১-৯৬ সালে তার দল সরকারে না থাকার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূমিকা কম রাখা অথবা ব্যক্তিগত আচার-আচরণে জনগণ অখুশি হওয়া
দুই. জামাতের প্রার্থী না থাকায় জামাতের সাধারণ কর্মী-ভোটারের অনাগ্রহতায় ভোটকেন্দ্রে অনুপস্থিতি।

২০০৮ সালের ১/১১-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী সতন্ত্র প্রার্থী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী সামসুল আলম পান ৪২ শতাংশ ভোট। ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ হিসেবে উঠে আসে- ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মান্দা উপজেলা বিএনপি’র তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জনপ্রিয় নেতা ডা. ইকরামুল বারী টিপুকে বহিষ্কার করায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া এবং জামায়াতের বারবার প্রার্থী না থাকায় জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ কর্মী-ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহীতা। সেই সাথে সারাদেশে বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া এবং ১/১১ সরকারের আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসানোর গোপণ অভিলাষ।

মান্দা আসনটি একক উপজেলা নিয়ে গঠিত হওয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলগুলোও জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস দিতে সহায়ক। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. ইকরামুল বারী টিপু ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। একই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের জোট প্রার্থী খোন্দকার আব্দুর রাকিব পান মাত্র ২২ শতাংশ ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরদার জসিম উদ্দিন পান ৩২ শতাংশ। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুর রশিদ ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গামা ৩২%, বিএনপির মকলেছুর রহমান ২১% এবং বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. টিপু ১৩% ভোট পান।

এই আসনে এমপি কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পেছনে প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক দলভিত্তিক ভোটব্যাংক, এবং জাতীয় রাজনীতির গতিধারার সম্মিলিত প্রভাব কাজ করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি থাকলে ভোটের হিসাব-নিকাশ অনেকটা পাল্টে যাবে। সাধারণ আওয়ামী লীগপন্থী ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকলে ফলাফল হবে একরকম, আবার কিছু অংশ ভোট দিলে ফল হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ অবস্থায় যিনি আওয়ামী ঘরানার ভোটারদের নিজের বাক্সে আনতে পারবেন, তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তবে অতিমাত্রায় আওয়ামী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে গেলে নিজ দলের আদর্শিক, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাঙন দেখা দিতে পারে।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে বিএনপি বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে শান্তিপ্রিয় মানুষ জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে। ধর্মীয় প্রচারণা, মসজিদভিত্তিক ওয়াজ-নসিহত এবং ভালো কাজে মানুষকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করছে জামায়াত। যার ফলে বিএনপি থেকে জামায়াতের দিকে রাজনৈতিক মাইগ্রেশন বাড়ছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কোণঠাসা হলেও কর্মীরা এখনও ঐক্যবদ্ধ। বিপরীতে বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এবং বিভক্তি রয়েছে চরমে। এ অবস্থায় জামায়াতের জেলা আমীর খোন্দকার আব্দুর রাকিব—যদিও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতা—তবুও দলের বাহিরে সাধারণ জনগণের মাঝে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। তিনি যদি আরও পরিচিত মুখ হতেন, যেমন: স্থানীয় কোনো কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জনপ্রিয় বক্তা বা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, যেমন- মাওলানা আমির হামজা, মিজানুর রহমান আজহারী অথবা মধ্যম সারির জাতীয় ইনফ্লুয়েঞ্জার তাহলে জামায়াতের পক্ষে গণভিত্তি তৈরি করা ও এমপি নির্বাচিত করা সহজ হতো।

এ দিক দিয়ে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. টিপু অনেক এগিয়ে। একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিয়মিত মানুষের কাছে থেকেছেন, সেবাদান করেছেন এবং জনসম্পৃক্ততা বজায় রেখেছেন। স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হয়, এই আসনে ইমাজ উদ্দিন (আওয়ামী লীগ) ও ডা. টিপু (বিএনপি)—এই দুইজন ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় ১০–১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট নিজ বাক্সে টানতে পারেন।

বর্তমানে আরও একজন প্রভাবশালী নেতা আব্দুল মতিন বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে রাজনীতি করায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে, যা মফস্বলের রাজনীতিতে তার বড় মূলধন হিসেবে কাজে দিচ্ছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে এমপি পদে নির্বাচিত হওয়া যেকোনো প্রার্থীর জন্যই আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। তবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশিত না হলে জামায়াতের জন্য ভোটের মাঠ হবে তুলনামূলক সহজ।