বিজেপির হয়ে নির্বাচন কমিশন ভোট চুরি করছে, অভিযোগ রাহুল গান্ধীর

- আপডেট সময় : ০১:০৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩ বার পড়া হয়েছে
বিহার রাজ্যের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে ভোট চুরির মারাত্মক অভিযোগ আনলেন। আজ শুক্রবার সংসদ ভবন চত্বরে তিনি বলেন, বিরোধীদের তদন্ত অনুযায়ী, শাসক বিজেপির সুবিধা করে দিতে ইসি ব্যাপকভাবে ভোট চুরি করছে। রাহুল বলেন, তাঁদের তদন্তে যা উঠে এসেছে তা ‘অ্যাটম বোমা’। সেই বোমা যখন ফাটবে নির্বাচন কমিশন তখন মুখ লুকানোর জায়গা পাবে না।
বিহারে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের বিরোধিতা এবং সে নিয়ে আলোচনার দাবিতে বিরোধীরা যখন অনড় ও সংসদ অচল, সেই সময় রাহুলের এই দাবি বিরোধী আন্দোলনে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। ইসির কর্তাদের নাম না করে রাহুল বলেন, যাঁরা এই ভোট চুরির কারিগর, যাঁরা এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কেউ পার পাবেন না। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কাউকে রেয়াত করা হবে না।
ইসির কর্তাদের উদ্দেশে রাহুল বলেন, ‘আপনারা যা করছেন তা দেশদ্রোহিতা। আমরা আপনাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করব। অবসর গ্রহণ করলেও কাউকে ছাড়া হবে না।’
রাহুলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তারা আমলে নিচ্ছে না। এই ধরনের অভিযোগ প্রায় নিত্যই হচ্ছে। এসব অভিযোগ উপেক্ষা করে স্বচ্ছভাবে কাজ করে যেতে কমিশনের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিহার নিয়ে সংসদ ভবন চত্বরে সম্মিলিত বিরোধীদের বিক্ষোভ দেখানোর সময় শুক্রবার গণমাধ্যমকে রাহুল বলেন, ‘মধ্য প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনের সময় আমাদের প্রথম সন্দেহ হয়। আমরা বুঝতে পারি ইসি কোনোভাবে কারচুপি করেছে। লোকসভা ভোটের সময় সেই সন্দেহ আরও বাড়ে। তারপর মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচন সেই সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত করে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, হুট করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ১ কোটি নতুন ভোটারের নাম উঠে গেল। তখন বোঝা গেল কমিশনকে বলে কোনো লাভ হবে না। তারা মানতে চাইবে না। কিছুই করবে না। সেই সময় ঠিক করা হলো, আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে তদন্ত করব। ছয় মাস ধরে সেই তদন্ত চলে। সেই তদন্তে যা উঠে এসেছে তা অ্যাটম বোমার চেয়ে কম কিছু নয়। সেই বোমা ফাটলে ইসির কর্তারা মুখ লুকানোর জায়গা পাবেন না।’
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিষোদ্গার, বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ নতুন নয়। গত জুন মাসে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় রাহুল এক নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি ৫ পদক্ষেপের উল্লেখ করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল নির্বাচন কমিশনার পদে নিজের লোকদের নিযুক্ত করা, ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটার নথিবদ্ধ করা, ভোটারদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া, যে আসনগুলোয় বিজেপি দুর্বল সেগুলোয় বেছে বেছে ভুয়া ভোটার নথিবদ্ধ করানো এবং তথ্য–প্রমাণ লুকিয়ে রাখা। তিনি লিখেছিলেন, মহারাষ্ট্র জিততে বিজেপি কেন মরিয়া তা বোঝা দুষ্কর নয়। ভোটে রিগিং করা ও ম্যাচ ফিক্সিং এক জিনিস। এভাবে ভোটে জেতা যায়, কিন্তু নষ্ট হয়ে যায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও মানুষের বিশ্বাস। সেই নিবন্ধেই রাহুল লিখেছিলেন, মহারাষ্ট্রের পর ম্যাচ ফিক্সিং হবে বিহারে। তারপর সেই সব রাজ্যে, যেখানে বিজেপির জেতার সম্ভাবনা কম।
শুক্রবারই বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাতে ইসি তুলে দেয়। রাজ্যের মোট ৯০ হাজার ৮১৭টি বুথের পরিসংখ্যান তাতে রয়েছে। এই নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) বিরুদ্ধে সব বিরোধী দল। তারা এই নিয়ে আলোচনার দাবিতে অনড়। সে জন্য লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিরোধী নেতারা জানিয়েছেন, বিহার ভোটার তালিকা তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা না হলে তাঁরা সংসদ চলতে দেবেন না। শুক্রবার সেই দাবিতে দুই কক্ষের অধিবেশনই মুলতবি করে দেওয়া হয়।
বিহারের এসআইআর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে স্থগিতাদেশ দিতে সুপ্রিম কোর্ট চাননি। যদিও বিচারপতিরা বলেছেন, অনিয়ম দেখলে তাঁরা পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে দিতে পারেন। ভোটারদের পরিচয়পত্রের নথি হিসেবে আধার কার্ড, রেশন কার্ড ও ইসির দেওয়া ভোটার কার্ড গ্রাহ্য করতে কমিশনকে সুপারিশ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট; কিন্তু ইসি তা মানতে চায়নি।