ঢাকা ০৩:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাল বিএনপি শিবিরের এই আয়োজনের দায় ভিসি ও প্রক্টর এড়াতে পারেন না: নাছির জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে, পড়ুন বিস্তারিত ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই নির্বাচন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদ্‌যাপন’ অনুষ্ঠান শুরু অধ্যাদেশের দাবিতে বুধবার রাস্তায় নামছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন দক্ষিণপন্থি অংশ বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করছে ইলেকশনটা যেন না হয়: তাসনিম খলিল ট্রাম্প কে পাল্টা ভারতের হুশিয়ারি ‘পাত্তা’ দিচ্ছে না ভারত ৫ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিন : তারেক রহমান

ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৪২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪ বার পড়া হয়েছে

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির দিন রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে সম্প্রচার করেছে। এর আগে আজ বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তিনি। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তিনি এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

সংস্কার, বিচার ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান—এ তিনটিই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ বলে ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা। নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।’

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর তিন দিনের মাথায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের দাবি নিয়ে আন্দোলন–কর্মসূচিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ দেখা দিলে লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১৩ জুন ওই বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে সরকার। এরপর আজ জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা।

সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এ দেশের সব নাগরিক একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সে জন্য সবার কাছে দোয়া চান প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এবারের নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসবের দিক থেকে, শান্তিশৃঙ্খলার দিক থেকে, ভোটার উপস্থিতির দিক থেকে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে, সে জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করতে আগামীকাল থেকেই মানসিক প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কারণে গত ১৫ বছর ধরে নাগরিকবৃন্দ ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে আমরা আমাদের বকেয়া আনন্দসহ মহা আনন্দে ভোট দিতে চাই। এবারের নির্বাচনে জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে যাবে, এ রকম ভোটাররা নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে তাদের এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এর মধ্যে নতুন নারী ভোটার থাকবে, নতুন পুরুষ ভোটার থাকবে। এর মধ্যে এমন ভোটার থাকবে, যারা ১৫ বছর আগে থেকেই ভোট দিতে পারত, কিন্তু জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেনি। এর মধ্যে আসবে যারা ১০ বছর আগে, ৫ বছর আগে ভোট দিতে পারত, কিন্তু পারেনি। আর আসবে ভাগ্যবান ও ভাগ্যবতীর দল, যারা এই প্রথমবার ভোটার হওয়ার যোগ্যতা লাভ করল এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোট দেওয়ার সুযোগও পেয়ে গেল।’

নির্বাচনের দিনকে ঈদের উৎসবের মতো করতে চান বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এবারের ভোটের আনন্দ থাকবে সবার মধ্যে। আপনারা সবাই বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।’

‘অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে’

দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যতগুলো বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোর নেপথ্যে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনো দল যদি গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, তার চূড়ান্ত পরিণতি কী, তা জুলাই অভ্যুত্থান দেখিয়ে দিয়েছে।

‘আমরা ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাইরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’

এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। মাথায় রাখবেন, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগপর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।’

নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ নেওয়ার জন্য প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এ জন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। দ্রুত এ অ্যাপটি চালু হবে। আপনারা আপনাদের সব পরামর্শ, সব মতামত, সব আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা এই অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব, সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেব।’

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, আপনাদের প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞা-পরিকল্পনায় কোনো কিছুতেই যেন তরুণেরা বাদ না পড়ে। নারীরা বাদ না পড়ে। মনে রাখবেন, যে তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে, তারা বিশ্বকেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার দল থেকে তাদের সে সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সবাই নিরাপদে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, এটা নিয়ে কারও কোনো আপত্তির সুযোগ রাখা যাবে না। আমরা সবাই সবার পছন্দের প্রতি সম্মান দেখাব—এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই নির্বাচন

আপডেট সময় : ১১:৪২:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির দিন রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে সম্প্রচার করেছে। এর আগে আজ বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তিনি। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তিনি এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

সংস্কার, বিচার ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান—এ তিনটিই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ বলে ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা। নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।’

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর তিন দিনের মাথায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের দাবি নিয়ে আন্দোলন–কর্মসূচিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ দেখা দিলে লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১৩ জুন ওই বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে সরকার। এরপর আজ জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা।

সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এ দেশের সব নাগরিক একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সে জন্য সবার কাছে দোয়া চান প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এবারের নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসবের দিক থেকে, শান্তিশৃঙ্খলার দিক থেকে, ভোটার উপস্থিতির দিক থেকে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে, সে জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করতে আগামীকাল থেকেই মানসিক প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, ‘দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কারণে গত ১৫ বছর ধরে নাগরিকবৃন্দ ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে আমরা আমাদের বকেয়া আনন্দসহ মহা আনন্দে ভোট দিতে চাই। এবারের নির্বাচনে জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে যাবে, এ রকম ভোটাররা নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে তাদের এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এর মধ্যে নতুন নারী ভোটার থাকবে, নতুন পুরুষ ভোটার থাকবে। এর মধ্যে এমন ভোটার থাকবে, যারা ১৫ বছর আগে থেকেই ভোট দিতে পারত, কিন্তু জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেনি। এর মধ্যে আসবে যারা ১০ বছর আগে, ৫ বছর আগে ভোট দিতে পারত, কিন্তু পারেনি। আর আসবে ভাগ্যবান ও ভাগ্যবতীর দল, যারা এই প্রথমবার ভোটার হওয়ার যোগ্যতা লাভ করল এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোট দেওয়ার সুযোগও পেয়ে গেল।’

নির্বাচনের দিনকে ঈদের উৎসবের মতো করতে চান বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এবারের ভোটের আনন্দ থাকবে সবার মধ্যে। আপনারা সবাই বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।’

‘অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে’

দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যতগুলো বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার সবগুলোর নেপথ্যে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনো দল যদি গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, তার চূড়ান্ত পরিণতি কী, তা জুলাই অভ্যুত্থান দেখিয়ে দিয়েছে।

‘আমরা ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাইরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’

এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। মাথায় রাখবেন, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগপর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।’

নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ নেওয়ার জন্য প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এ জন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। দ্রুত এ অ্যাপটি চালু হবে। আপনারা আপনাদের সব পরামর্শ, সব মতামত, সব আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা এই অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব, সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেব।’

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, আপনাদের প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞা-পরিকল্পনায় কোনো কিছুতেই যেন তরুণেরা বাদ না পড়ে। নারীরা বাদ না পড়ে। মনে রাখবেন, যে তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে, তারা বিশ্বকেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার দল থেকে তাদের সে সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সবাই নিরাপদে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, এটা নিয়ে কারও কোনো আপত্তির সুযোগ রাখা যাবে না। আমরা সবাই সবার পছন্দের প্রতি সম্মান দেখাব—এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’