ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পুলিশে ঘেরা ধানমণ্ডি ৩২, গান বাজিয়ে ১৫ আগস্ট উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:০৯:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১ বার পড়া হয়েছে

ধানমণ্ডি ৩২- এ সাউন্ডবক্স লাগিয়ে পিকআপ ভ্যানের ওপর বড় স্ক্রিনে চলছে গান। সংগৃহীত ছবি

৩৬ জুলাই নাকি ৩৬ জুলাই’ – বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে পৌঁছানোর পর সবার আগে কানে ভেসে এলো সাউন্ডবক্সে ছেড়ে দেওয়া একটি গানের এই লাইন। সড়কে ঢোকার মুখেই ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের চলাচল আটকে রাখা হয়েছে সেখানে। 

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ব্যারিকেড পার হয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখা গেল একটা পিকআপ ভ্যানের ওপরে বড় স্ক্রিন আর সাউন্ডবক্স লাগিয়ে একের পর এক চলছে দেশাত্মবোধক গান। ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে রাস্তাটির অপর প্রান্তেও, অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পরের অংশেও। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায়, সেখানে আছেন কেবল টহলরত পুলিশ সদস্য আর সাংবাদিকরা।

এমনটাই দেখা গেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ৫০ বছর পুরো হওয়ার দিনটিতে তার বাড়ির আশপাশের চিত্র। দুই বছর আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে এটা পুরোপুরি আলাদা এক দৃশ্য।

৩২ নম্বরের এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অতর্কিত হামলা চালিয়ে পরিবারের ১৮ জন সদস্যসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এর প্রায় ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করলে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তা পুনর্বহাল করা হয়।

২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার আবার সেই স্বীকৃতি বতিল করে। তারপর থেকে পরপর দুই বছরই শোক দিবস পালনে বাধা দেওয়া হয়।

কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছিলেন, ‘১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটি দুঃখজনক। তবে এ দিনটি আগস্টের অন্য ৩১ দিনের মতোই। কেউ ধানমণ্ডিতে বা কোথাও কর্মসূচি করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবারও ৩২ নম্বর সড়কের সামনে ঘটেছে বেশ কিছু হেনস্তার ঘটনা। শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই সড়কের মুখে জটলা বাঁধছে। সেই দৃশ্য ধারণ করতে হুড়মুড় করে এগিয়ে আসছেন মোবাইল আর ক্যামেরা হাতে থাকা মানুষজন। খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে আলাপ হয় পাশে থাকা আরেকজন সাংবাদিকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শুধু শোক জানাতে আসা বা দেখতে আসা বেশ কয়েকজনকে হয়রানি করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও ভাসছে এমন বেশ কিছু ভিডিও।

এর মধ্যে একটিতে দেখা গেছে, একজন মধ্যবয়সী নারী গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘আজ ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবস। আমি এখানে ফুল দিতে আইছি। আমার ফুলডি ফালায় দিছে। আমি কি মিছিল-মিটিং করতে আইছি।’ এ সময় সানগ্লাস পরা একজন ব্যক্তি তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করতে থাকলে পুলিশ ওই নারীকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

এমনই আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ গণমাধ্যমে বলছেন, ‘দাঁড়িয়ে থাকাটাও আমার জন্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।’ এছাড়াও বছরের শুরুতে এই ৩২ নম্বরেই শেখ মুজিবের বাড়িটি ভাঙার সময় কাউকে থামানো হয়নি, কিন্তু আজ আইনশৃঙ্খলার অবনতির দোহাই দিয়ে বাড়িটি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না কেন– সেই প্রশ্ন করেন তিনি।

তখন সানগ্লাস পরা আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘হাসিনা যখন এতগুলো মানুষের প্রাণ নিল, তখন আপনাদের হৃদয় একটু কাঁপে নাই!’ এ সময় তার পেছন থেকে কেউ একজন ওই ব্যক্তিকে ‘আওয়ামী লীগ’ ট্যাগ দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ধর, ওরে ধর’।

তবে বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে বলা হচ্ছে– আওয়ামী লীগকর্মী সন্দেহে এক শিবিরকর্মীকে মারধর করা হয়েছে শেখ মুজিবের বাড়ির কাছে। ভিডিওতে মারধরের শিকার হওয়া মামুন নামের ওই লোক নিজের পরিচয় দেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা কলেজ শাখার প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। তাকে ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, কলাবাগানে তার বাসা হওয়ায় ৩২ নম্বর দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হয়নি, বরং আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে মারধর করা হয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকলেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

যেভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল ৩২ নম্বরের বাড়িটি

গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঠিক ছয় মাস পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতভর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় ভবনটির একাংশ। ছাত্র সমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন– এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বক্তব্য দিলে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট দেওয়া হয়। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভবনটি থেকে অবকাঠামোর বিভিন্ন জিনিস লুটের ঘটনাও ঘটে। পরদিন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এবং ভবন ভাঙার জন্য গালাগাল করায় একজন নারীসহ দুইজনকে মারধর করতে দেখা যায়।

রাতে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫

বৃহস্পতিবার থেকেই শেখ মুজিবের বাড়িটির আশপাশে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছিল। তবে এ দিন রাতে সেখানে কিছু লোক জড়ো হয় এবং আওয়ামী লীগ সন্দেহে কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে আসেননি। তবে তাদের অনেকে বিএনপির পক্ষে স্লোগান দেন। একটি ভিডিওতে ‘তারেক ভাই কথা দিলাম, ৩২ দখল নিলাম’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন ধানমণ্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা। তিনি বলেন, ‘মোবাইল চোর, ছিনতাইকারী এমন বিভিন্ন সন্দেহে তাদের আটক করা হয়েছে। এদের যাচাই-বাছাই করার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এছাড়া গতকাল লোক সমাগম বেশি থাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই প্লাটুন ফোর্স মোতায়েন করা আছে, জানান তিনি। এছাড়াও রাত ১২টার দিকে ৩২ নম্বরের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের পর কয়েকজনকে আটক করার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজে গান ছেড়ে উদযাপন

১৫ আগস্ট উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা গেছে ভিন্ন এক চিত্র। রাত ১২ টার দিকে ছেলেদের হল থেকে বেরিয়ে আসেন অনেকে। সাউন্ডবক্সে ডিজে গান ছেড়ে নেচে আনন্দ-উৎসব শুরু করেন তারা। তাদের মধ্যে কারও কারও রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে বলে জানা গেছে।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও একইভাবে ১৫ আগস্ট পালন করা হয়েছিল। একটি গণমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, চারশো থেকে পাঁচশো শিক্ষার্থী হলপাড়া হিসেবে পরিচিত সূর্যসেন হলের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ভাবনা চত্বরে জড়ো হন এবং গান ছেড়ে নাচতে থাকেন। তবে নারীদের হল থেকে কারও বেরিয়ে আসার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী জাকির হাসান সাগর বলেন, আমরা যে ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে গান বাজিয়ে নাচানাচি করেছি এটা শেখ মুজিবের প্রতি ক্ষোভ থেকে করিনি। বরং ছাত্রলীগের আমলে আমরা যারা হলে তাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি সেখান থেকে।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী যতটা আনন্দ করেছি, প্রায় সবাই গেস্টরুম প্রোগ্রামের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলাম ছাত্রলীগের আমলে। ১৫ অগাস্টকে কেন্দ্র করে সারা মাসজুড়ে গ্রেস্টরুমে প্রোগ্রাম রাখা হইতো। এই আগস্ট মাস ছিল ছাত্রলীগের জন্য রমজান মাস। এই এক মাসে ক্লাস বাদ দিয়েও তাদের প্রোগ্রামে যেতে তারা বাধ্য করত। কেউ না গেলে তাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করা হতো।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

পুলিশে ঘেরা ধানমণ্ডি ৩২, গান বাজিয়ে ১৫ আগস্ট উদযাপন

আপডেট সময় : ০৬:০৯:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

৩৬ জুলাই নাকি ৩৬ জুলাই’ – বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে পৌঁছানোর পর সবার আগে কানে ভেসে এলো সাউন্ডবক্সে ছেড়ে দেওয়া একটি গানের এই লাইন। সড়কে ঢোকার মুখেই ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণ মানুষের চলাচল আটকে রাখা হয়েছে সেখানে। 

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ব্যারিকেড পার হয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখা গেল একটা পিকআপ ভ্যানের ওপরে বড় স্ক্রিন আর সাউন্ডবক্স লাগিয়ে একের পর এক চলছে দেশাত্মবোধক গান। ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে রাস্তাটির অপর প্রান্তেও, অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পরের অংশেও। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায়, সেখানে আছেন কেবল টহলরত পুলিশ সদস্য আর সাংবাদিকরা।

এমনটাই দেখা গেছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ৫০ বছর পুরো হওয়ার দিনটিতে তার বাড়ির আশপাশের চিত্র। দুই বছর আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে এটা পুরোপুরি আলাদা এক দৃশ্য।

৩২ নম্বরের এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অতর্কিত হামলা চালিয়ে পরিবারের ১৮ জন সদস্যসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এর প্রায় ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করলে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তা পুনর্বহাল করা হয়।

২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার আবার সেই স্বীকৃতি বতিল করে। তারপর থেকে পরপর দুই বছরই শোক দিবস পালনে বাধা দেওয়া হয়।

কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছিলেন, ‘১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটি দুঃখজনক। তবে এ দিনটি আগস্টের অন্য ৩১ দিনের মতোই। কেউ ধানমণ্ডিতে বা কোথাও কর্মসূচি করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবারও ৩২ নম্বর সড়কের সামনে ঘটেছে বেশ কিছু হেনস্তার ঘটনা। শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই সড়কের মুখে জটলা বাঁধছে। সেই দৃশ্য ধারণ করতে হুড়মুড় করে এগিয়ে আসছেন মোবাইল আর ক্যামেরা হাতে থাকা মানুষজন। খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে আলাপ হয় পাশে থাকা আরেকজন সাংবাদিকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শুধু শোক জানাতে আসা বা দেখতে আসা বেশ কয়েকজনকে হয়রানি করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও ভাসছে এমন বেশ কিছু ভিডিও।

এর মধ্যে একটিতে দেখা গেছে, একজন মধ্যবয়সী নারী গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘আজ ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবস। আমি এখানে ফুল দিতে আইছি। আমার ফুলডি ফালায় দিছে। আমি কি মিছিল-মিটিং করতে আইছি।’ এ সময় সানগ্লাস পরা একজন ব্যক্তি তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করতে থাকলে পুলিশ ওই নারীকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

এমনই আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ গণমাধ্যমে বলছেন, ‘দাঁড়িয়ে থাকাটাও আমার জন্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।’ এছাড়াও বছরের শুরুতে এই ৩২ নম্বরেই শেখ মুজিবের বাড়িটি ভাঙার সময় কাউকে থামানো হয়নি, কিন্তু আজ আইনশৃঙ্খলার অবনতির দোহাই দিয়ে বাড়িটি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না কেন– সেই প্রশ্ন করেন তিনি।

তখন সানগ্লাস পরা আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘হাসিনা যখন এতগুলো মানুষের প্রাণ নিল, তখন আপনাদের হৃদয় একটু কাঁপে নাই!’ এ সময় তার পেছন থেকে কেউ একজন ওই ব্যক্তিকে ‘আওয়ামী লীগ’ ট্যাগ দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ধর, ওরে ধর’।

তবে বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে বলা হচ্ছে– আওয়ামী লীগকর্মী সন্দেহে এক শিবিরকর্মীকে মারধর করা হয়েছে শেখ মুজিবের বাড়ির কাছে। ভিডিওতে মারধরের শিকার হওয়া মামুন নামের ওই লোক নিজের পরিচয় দেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা কলেজ শাখার প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। তাকে ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, কলাবাগানে তার বাসা হওয়ায় ৩২ নম্বর দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হয়নি, বরং আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে মারধর করা হয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকলেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

যেভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল ৩২ নম্বরের বাড়িটি

গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঠিক ছয় মাস পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতভর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় ভবনটির একাংশ। ছাত্র সমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন– এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বক্তব্য দিলে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট দেওয়া হয়। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভবনটি থেকে অবকাঠামোর বিভিন্ন জিনিস লুটের ঘটনাও ঘটে। পরদিন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এবং ভবন ভাঙার জন্য গালাগাল করায় একজন নারীসহ দুইজনকে মারধর করতে দেখা যায়।

রাতে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫

বৃহস্পতিবার থেকেই শেখ মুজিবের বাড়িটির আশপাশে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছিল। তবে এ দিন রাতে সেখানে কিছু লোক জড়ো হয় এবং আওয়ামী লীগ সন্দেহে কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে আসেননি। তবে তাদের অনেকে বিএনপির পক্ষে স্লোগান দেন। একটি ভিডিওতে ‘তারেক ভাই কথা দিলাম, ৩২ দখল নিলাম’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন ধানমণ্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা। তিনি বলেন, ‘মোবাইল চোর, ছিনতাইকারী এমন বিভিন্ন সন্দেহে তাদের আটক করা হয়েছে। এদের যাচাই-বাছাই করার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এছাড়া গতকাল লোক সমাগম বেশি থাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই প্লাটুন ফোর্স মোতায়েন করা আছে, জানান তিনি। এছাড়াও রাত ১২টার দিকে ৩২ নম্বরের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের পর কয়েকজনকে আটক করার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজে গান ছেড়ে উদযাপন

১৫ আগস্ট উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা গেছে ভিন্ন এক চিত্র। রাত ১২ টার দিকে ছেলেদের হল থেকে বেরিয়ে আসেন অনেকে। সাউন্ডবক্সে ডিজে গান ছেড়ে নেচে আনন্দ-উৎসব শুরু করেন তারা। তাদের মধ্যে কারও কারও রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে বলে জানা গেছে।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও একইভাবে ১৫ আগস্ট পালন করা হয়েছিল। একটি গণমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, চারশো থেকে পাঁচশো শিক্ষার্থী হলপাড়া হিসেবে পরিচিত সূর্যসেন হলের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ভাবনা চত্বরে জড়ো হন এবং গান ছেড়ে নাচতে থাকেন। তবে নারীদের হল থেকে কারও বেরিয়ে আসার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী জাকির হাসান সাগর বলেন, আমরা যে ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে গান বাজিয়ে নাচানাচি করেছি এটা শেখ মুজিবের প্রতি ক্ষোভ থেকে করিনি। বরং ছাত্রলীগের আমলে আমরা যারা হলে তাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি সেখান থেকে।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী যতটা আনন্দ করেছি, প্রায় সবাই গেস্টরুম প্রোগ্রামের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলাম ছাত্রলীগের আমলে। ১৫ অগাস্টকে কেন্দ্র করে সারা মাসজুড়ে গ্রেস্টরুমে প্রোগ্রাম রাখা হইতো। এই আগস্ট মাস ছিল ছাত্রলীগের জন্য রমজান মাস। এই এক মাসে ক্লাস বাদ দিয়েও তাদের প্রোগ্রামে যেতে তারা বাধ্য করত। কেউ না গেলে তাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করা হতো।