শান্তি চুক্তিতে দোনেৎস্ক-লুহানস্ক ছাড়াও আরও শর্ত দিলেন পুতিন

- আপডেট সময় : ০৬:০০:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ১ বার পড়া হয়েছে
ইউক্রেনের সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তিতে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়াসহ একাধিক শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিনিময়ে কিছু এলাকায় সামরিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকে এ প্রস্তাবের বিষয়টি আলোচনায় আসে বলে জানিয়েছেন দুই কূটনৈতিক সূত্র। শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রুশ প্রেসিডেন্টের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
সূত্রগুলো জানায়, রাশিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেনীয় সেনাদের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে। বিনিময়ে দক্ষিণের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার নিশ্চয়তা দেবে রাশিয়া। তবে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা দোনেৎস্ক ছাড়তে রাজি নয়। তাদের মতে, ওই অঞ্চলে সেনাদের শক্ত অবস্থান ইউক্রেনের গভীরে রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধে সহায়ক।
ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষক সংস্থা ডিপ স্টেটের তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে সুমি ও খারকিভের প্রায় ৪৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রাশিয়ার দখলে আছে। অপরদিকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত দনবাস অঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। যদিও রাশিয়া এ অঞ্চলকে নিজেদের দাবি করে আসছে।
আলাস্কা বৈঠক নিয়ে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি। ইউক্রেনকে এতে রাজি হতে হবে। তারা হয়তো ‘‘না’’ করে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের ভূমি ভাগাভাগি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে পুতিনের ‘বড় ঐকমত্য’ হয়েছে। তবে বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্রগুলোর মতে, শান্তিচুক্তির শর্ত হিসেবে পুতিন ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি চাইছেন। যদিও কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো এখনো এ দাবি প্রত্যাখ্যান করছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।
আরও জানা গেছে, পুতিন চান রাশিয়ার ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক। যদিও এসব ইউরোপীয় না মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তা পরিষ্কার নয়। একই সঙ্গে তিনি ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার শর্তও দিয়েছেন। তবে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কিছু দিক নিয়ে রাশিয়া সমঝোতায় যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এ ছাড়া ইউক্রেনের ভেতরে রুশ ভাষাকে সরকারি মর্যাদা দেওয়া এবং রুশ অর্থোডক্স গির্জাকে অবাধ কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রাখার দাবিও তুলেছে মস্কো। তবে কিয়েভের নিরাপত্তা সংস্থা অভিযোগ করেছে, এই গির্জা রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি ও প্রচার চালায়। যদিও গির্জা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা মস্কোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
পুতিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সম্পূর্ণ সমঝোতা না হলে কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না।’ এতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অন্যতম দাবি থমকে যাচ্ছে। এদিকে ইউক্রেন প্রতিদিনই রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে পড়ছে। আগামীকাল (সোমবার) জেলেনস্কি ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে রাশিয়ার শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।