ঢাকা ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদেশি এয়ারলাইন্সের জিএসএ বাধ্যতামূলক বিধান বাতিল : বছরে ১০০ কোটির বেশি রাজস্ব হারাতে পারে সরকার

  • আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে


বিদেশি এয়ারলাইন্স গুলোর জন্য স্থানীয় জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার বিধান বাতিল করা হলে সরকার বছরে সরাসরি ১০০ কোটির বেশি রাজস্ব হারাতে পারে এবং অতিরিক্ত ৫০০ কোটিরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা বহিঃপ্রবাহ ঘটতে পারে বলে শিল্প সংশ্লিষ্টদের অনুমান।

বিমান চলাচল খাতের অংশীজনরা জিএসএ বাধ্যতামূলক বিধান বাতিলের যেকোনো প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার তত্ত্বাবধান দুর্বল করবে, স্বচ্ছতা হ্রাস করবে এবং কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উভয়ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এই প্রতিক্রিয়া আসে এমন সময়ে যখন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বসির উদ্দীন আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করেছেন ২০১৭ সালের সিভিল এভিয়েশন আইন পর্যালোচনার জন্য। ওই আইনে বাংলাদেশে পরিচালিত বিদেশি এয়ারলাইনসের জন্য জিএসএ নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

শিল্প সংশ্লিষ্ট ও নবগঠিত জিএসএ ফোরামের সদস্যরা বলেন, এই বিধান বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে তাদের কার্যক্রম কার্যকরভাবে তদারকি করার সুযোগ দেয়।

টাস এভিয়েশন সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান কে এম মজিবুল হক বলেন, “এই আইন সংশোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়া ধ্বংস করবে এবং বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে স্থানীয় জবাবদিহিতা ছাড়াই পরিচালনার সুযোগ করে দেবে।”

তিনি সরকারকে আইন সংশোধনের আগে শিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান এবং জিএসএ বিমান ভাড়া বাড়িয়ে দেয়—এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। “জিএসএ কেবল এয়ারলাইনসের প্রচার ও বিপণনে কাজ করে, টিকিট বিক্রি ও মূল্য নির্ধারণ সম্পূর্ণভাবে এয়ারলাইনসের হাতে,” তিনি যোগ করেন।

ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জিএসএ কার্যক্রমে সরাসরি ৫,০০০-এর বেশি মানুষ কর্মরত এবং আরও প্রায় ১৫,০০০ মানুষ পরোক্ষভাবে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। তারা সতর্ক করেছেন, জিএসএ ধারা বাতিল করা হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হ্রাস ঘটতে পারে, কারণ বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো সম্ভবত খুব অল্প সংখ্যক স্থানীয় কর্মী নিয়োগ করবে।

অতীত অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে তারা বলেন, এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, সাউদিয়া, থাই এয়ারওয়েজ ও এয়ার ইন্ডিয়ার মতো বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো জিএসএ ছাড়া বাংলাদেশে পরিচালিত হলে বাজারে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘ টিকিট লাইনের অভিযোগ উঠেছিল—বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। “জিএসএ বাধ্যতামূলক হওয়ার পর পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়,” বলেন হক।

জিএসএ ব্যবস্থা স্থানীয় এজেন্টদের কাছ থেকে সংগৃহীত কর ও নিয়ন্ত্রক ফি’র মাধ্যমে সরকারের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজস্বও আনে—যা এই বিধান তুলে দিলে হারিয়ে যাবে।

হক আরও বলেন, জিএসএ এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বিদেশি সদর দপ্তরে পৌঁছে দেয়—যা কেবল বিদেশি কান্ট্রি ম্যানেজার দিয়ে সম্ভব নয়। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭০-এর দশক থেকে জিএসএ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের উপস্থিতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এমনকি প্যান অ্যাম, ইউনাইটেড, লুফথানসা ও কেএলএম-এর মতো বিখ্যাত এয়ারলাইনস চালু করতেও সহায়তা করেছে।

জিএসএ ফোরাম ন্যায়সঙ্গত ও প্রগতিশীল বিমান চলাচল নীতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং কর্মসংস্থান, রাজস্ব ও দেশের বিমান পরিবহন খাতের সুরক্ষার জন্য বর্তমান আইনগত বিধান বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বিদেশি এয়ারলাইন্সের জিএসএ বাধ্যতামূলক বিধান বাতিল : বছরে ১০০ কোটির বেশি রাজস্ব হারাতে পারে সরকার

আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫


বিদেশি এয়ারলাইন্স গুলোর জন্য স্থানীয় জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার বিধান বাতিল করা হলে সরকার বছরে সরাসরি ১০০ কোটির বেশি রাজস্ব হারাতে পারে এবং অতিরিক্ত ৫০০ কোটিরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা বহিঃপ্রবাহ ঘটতে পারে বলে শিল্প সংশ্লিষ্টদের অনুমান।

বিমান চলাচল খাতের অংশীজনরা জিএসএ বাধ্যতামূলক বিধান বাতিলের যেকোনো প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার তত্ত্বাবধান দুর্বল করবে, স্বচ্ছতা হ্রাস করবে এবং কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উভয়ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এই প্রতিক্রিয়া আসে এমন সময়ে যখন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বসির উদ্দীন আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করেছেন ২০১৭ সালের সিভিল এভিয়েশন আইন পর্যালোচনার জন্য। ওই আইনে বাংলাদেশে পরিচালিত বিদেশি এয়ারলাইনসের জন্য জিএসএ নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

শিল্প সংশ্লিষ্ট ও নবগঠিত জিএসএ ফোরামের সদস্যরা বলেন, এই বিধান বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে তাদের কার্যক্রম কার্যকরভাবে তদারকি করার সুযোগ দেয়।

টাস এভিয়েশন সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান কে এম মজিবুল হক বলেন, “এই আইন সংশোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়া ধ্বংস করবে এবং বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে স্থানীয় জবাবদিহিতা ছাড়াই পরিচালনার সুযোগ করে দেবে।”

তিনি সরকারকে আইন সংশোধনের আগে শিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান এবং জিএসএ বিমান ভাড়া বাড়িয়ে দেয়—এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। “জিএসএ কেবল এয়ারলাইনসের প্রচার ও বিপণনে কাজ করে, টিকিট বিক্রি ও মূল্য নির্ধারণ সম্পূর্ণভাবে এয়ারলাইনসের হাতে,” তিনি যোগ করেন।

ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জিএসএ কার্যক্রমে সরাসরি ৫,০০০-এর বেশি মানুষ কর্মরত এবং আরও প্রায় ১৫,০০০ মানুষ পরোক্ষভাবে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। তারা সতর্ক করেছেন, জিএসএ ধারা বাতিল করা হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হ্রাস ঘটতে পারে, কারণ বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো সম্ভবত খুব অল্প সংখ্যক স্থানীয় কর্মী নিয়োগ করবে।

অতীত অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে তারা বলেন, এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, সাউদিয়া, থাই এয়ারওয়েজ ও এয়ার ইন্ডিয়ার মতো বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো জিএসএ ছাড়া বাংলাদেশে পরিচালিত হলে বাজারে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘ টিকিট লাইনের অভিযোগ উঠেছিল—বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। “জিএসএ বাধ্যতামূলক হওয়ার পর পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়,” বলেন হক।

জিএসএ ব্যবস্থা স্থানীয় এজেন্টদের কাছ থেকে সংগৃহীত কর ও নিয়ন্ত্রক ফি’র মাধ্যমে সরকারের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজস্বও আনে—যা এই বিধান তুলে দিলে হারিয়ে যাবে।

হক আরও বলেন, জিএসএ এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বিদেশি সদর দপ্তরে পৌঁছে দেয়—যা কেবল বিদেশি কান্ট্রি ম্যানেজার দিয়ে সম্ভব নয়। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭০-এর দশক থেকে জিএসএ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের উপস্থিতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এমনকি প্যান অ্যাম, ইউনাইটেড, লুফথানসা ও কেএলএম-এর মতো বিখ্যাত এয়ারলাইনস চালু করতেও সহায়তা করেছে।

জিএসএ ফোরাম ন্যায়সঙ্গত ও প্রগতিশীল বিমান চলাচল নীতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং কর্মসংস্থান, রাজস্ব ও দেশের বিমান পরিবহন খাতের সুরক্ষার জন্য বর্তমান আইনগত বিধান বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছে।