ঢাকা ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১৫ ভ্রমণ স্থান

পর্যটন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

ছবি: সংগৃহীত

ষড়ঋতুর এই দেশে বর্ষা নিয়ে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। বাঙালিদের আবেগ, সাহিত্য এমনকি খাদ্যাভ্যাস জুড়ে আছে বৃষ্টি ও বর্ষার বৈচিত্রপূর্ণ আবেশ। তেমনি বর্ষাকালে ভ্রমণ করাটাও বর্ষার আরেক যাদুকরী মুগ্ধতার আনন্দময় পরিণতি।

বর্ষাকালে বাংলাদেশের সকল ভ্রমণ স্থানগুলো সমান পূর্ণতা না পেলেও কিছু কিছু দর্শনীয় স্থান যেন নতুন করে যৌবন ফিরে পায়। এমন কিছু জায়গা আছে যা শুধু বর্ষাকালেই আসল সৌন্দর্য মেলে ধরে। আর সেই সকল স্থানে ভীড় করে হাজার হাজার ভ্রমণ পাগল পর্যটক। ভ্রমণ গাইডের আজকের আয়োজনে চলুন জেনে নেয়া যাক বর্ষাকালে দেশে ভ্রমণের সেরা ১৫ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

১. টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমির নাম টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor)। সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত এই হাওরটি স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ৪৬ টি দ্বীপের মত ভাসমান গ্রাম রয়েছে। ভারতের মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণা এসে বাড়িয়েছে এই হাওরের বৈচিত্র। বর্ষাকালই হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অনেক বিলাসবহুল হাউজবোট আছে ঘুরে দেখার জন্যে এই অপরূপ সৌন্দর্য।

বিস্তারিত পড়ুন : টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইড

২. রাতারগুল, সিলেট
সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতারগুল (Ratargul) জলাবন বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন। জীববৈচিত্রে পরিপূর্ণ পৃথিবীর অন্যতম এই জলাবন বছরে ৪/৫ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। আর তখন জলে ডুবে থাকা প্রাকৃতিক বনের সৌন্দর্য দেখতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা ‘সিলেটের সুন্দরবন’ খ্যাত রাতারগুলে এসে ভিড় করেন। অনেকে আবার রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন হিসাবেও আখ্যায়িত করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।

৩. ভোলাগঞ্জ, সিলেট
বর্ষায় সিলেট অঞ্চল বেড়ানোর জন্যে উপযুক্ত সময়। বর্তমানে জনপ্রিয় ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর বেড়ানোর জন্যে এই বর্ষাকালকে বেছে নিতে পারেন। বর্ষায় পাহাড়ের ভাজে লুকিয়ে থাকা মেঘ, পাথর কোয়ারির উপর ছুটে চলা অভিরাম পানির স্রোতধারা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সিলেট থেকে খুব সহজেই একদিনে ঘুরে আসায় যায় ভোলাগঞ্জ থেকে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের ভোলাগঞ্জ ভ্রমণ গাইড।

৪. বিছনাকান্দি, সিলেট
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিছনাকান্দি (Bisnakandi) একটি পাথর কোয়ারী। পাথরের উপর বয়ে চলা কাচের মত স্বচ্ছ জলের ধারা, পাহাড়ের গায়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ির দৃশ্য এখানে আগত পর্যটকদের বিনোদিত করে। পাথরের বিছানার উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানিতে গা ভেজানোয় যে মানসিক প্রশান্তি আছে সেই প্রশান্তি পর্যটকদের বারবার বিছানাকান্দি নিয়ে আসে। এক কথায় বিছানাকান্দি যেন পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথরের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে।

বিস্তারিত পড়ুন : বিছনাকান্দি ভ্রমণ গাইড

৫. সাজেক, রাঙ্গামাটি
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়িতে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley) বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পর্যটন আকর্ষণ। মেঘের লুকোচুরি খেলা কিংবা মেঘ ছুঁয়ে দেখতে চাইলে সাজেকের বিকল্প নেই। রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত সাজেক ভ্যালি থেকে রাঙামাটির বেশ কিছু অংশ দেখে যায়। তাই সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়। সাজেক এমনই এক আশ্চর্য্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত প্রকৃতির এই তিন ঋতুর সান্নিধ্য অনুভব করা যায়। তাই দিন হোক কিংবা রাত সাজেক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা অপূর্ব এক ছবি।

বিস্তারিত পড়ুন : সাজেক ভ্রমণ গাইড

৬. ভাসমান বাজার, বরিশাল ও ঝালকাঠি
বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভিমরুলিতে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating Guava Market)। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে এই ভাসমান পেয়ারা বাজার। জুলাই ও আগস্ট মাস পেয়ারার মৌসুম হলেও মাঝে মাঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে ভাসমান পেয়ারার বাজার। সবচেয়ে মজার বেপার হচ্ছে এই বাজারে আসা সকল নৌকার আকার এবং নকশা প্রায় একইরকম।

৭. কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এমন একটি জায়গা যা বছরের যে কোন সময় যেতে পারেন। প্রতিটি ঋতুতে একেক রূপের দেখা পাবেন। বর্ষায় বৃষ্টিমুখর সমুদ্র সৈকতের অভিজ্ঞতা নিশ্চত খারাপ লাগবেনা আপনার। কক্সবাজার ভ্রমণ সহজ হওয়ায় যে কোন সময়ই হুট করে প্ল্যান করে চলে যেতে পারবেন।

৮. খৈয়াছড়া ঝর্ণা, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের অবস্থিত খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfall) বাংলাদেশের বৃহৎ ঝর্ণাগুলোর মধ্যে অন্যতম। নান্দ্যনিক এই ঝর্ণাতে সর্বমোট ৯ টি বড় ধাপ বা ক্যাসকেড রয়েছে। গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ আর পাহাড়ের সৌন্দর্যে অনন্য খৈয়াছড়া ঝর্ণাকে বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমীরা ‘ঝর্ণা রানী’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। বাঁশের সাকো, সবুজ শস্যের ক্ষেত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ ও ঝিরি পেরিয়ে খৈয়াছড়া ঝর্ণার সামনে এসে দাঁড়ালে পথের সমস্ত ক্লান্তি যেন নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আর শরীরে ঝর্ণার শীতল জলের স্পর্শ এক অপার্থিব প্রশান্তিতে মনকে ভরিয়ে তোলে। সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ঝর্ণা রয়েছে।

বিস্তারিত পড়ুন : খৈয়াছড়া ভ্রমণ গাইড

৯. কাপ্তাই লেক, রাঙ্গামাটি
কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake) পার্বত্য সৌন্দর্যের রুপের রানী রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত। অথৈ জলরাশি, পাহাড় এবং চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহে ঘেরা ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত কাপ্তাই লেক আয়তনের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ একটি কৃত্রিম হ্রদ। ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করা হলে কাপ্তাই লেকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অফুরন্ত জীববৈচিত্রে পূর্ণ কাপ্তাই লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, অসংখ্য পাখি এবং হ্রদ কেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

১০. নীলগিরি, বান্দরবান
বান্দরবানের নীলগিরি (Nilgiri) পাহাড়চূড়ায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কতৃক পরিচালিত নীলগিরি ইতিমধ্যেই ‘বাংলার দার্জিলিং’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ার কারণে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে সর্বদাই থাকে মেঘের উপস্থিতি। নীলগিরির চূড়া থেকে সারি সারি পাহাড়ের পাশাপাশি আকাশ পরিস্কার থাকলে বগালেক, কেওক্রাডং, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদী দেখা যায়। বছরজুড়েই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এই পর্যটক কেন্দ্রে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে।

১১. নীলাচল, বান্দরবান
বান্দরবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে কাছে টাইগার পাড়ায় নীলাচল (Nilachol) অবস্থিত। দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ে ঘেরা চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাখির চোখে বান্দরবানকে দেখতে চাইলে নীলাচলের জুড়ি নেই। দূরের পাহাড়ের ঢালের আঁকা-বাঁকা পথ, আদিবাসী নিবাস আর রূপালী নদী যেন কোন শিল্পীর আঁকা রঙিন ছবির ক্যানভাস। আর বর্ষাকালে নীলাচলে আসলে মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। নীলাচল থেকে সুন্দর সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। আর পূর্নিমার রাতে নীলাচলের চারপাশের পরিবেশ যেন এক অপার্থিব জগতে নিয়ে যায়।

বিস্তারিত পড়ুন : নীলাচন ভ্রমণ গাইড

১২. গুলিয়াখালী সৈকত, চট্টগ্রাম
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত (Guliakhali Sea Beach) স্থানীয় মানুষের কাছে ‘মুরাদপুর বীচ’ নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতকে সাজাতে প্রকৃতিও যেন কোনরূপ কৃপনতা করেনি। সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া সমুদ্র সৈকত, কেওড়া বন এবং একই সাথে সোয়াম্প ফরেস্ট (জলাবন) ও ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য দেখার অভিজ্ঞতা এখানে আগত পর্যটকদের বিমোহিত করে। এছাড়া গুলিয়াখালীতে আছে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা।

১৩. কিশোরগঞ্জ হাওর
বর্ষায় ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত হতে পারে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চল। অথৈই জলে ভেসা থাকা ছোট ছোট গ্রামীন জনপদ, সেই সাথে জনপ্রিয় মিঠামইন-অষ্টগ্রাম হাওর রোড ভ্রমণের জন্যে যেতে পারেন কিশোরগঞ্জ। ঢাকা থেকে কাছে হওয়ায় একদিনেই ঘুরে আসা যায় নিকলী-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর। বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের মিঠামইন অষ্টগ্রাম হাওর রোড ভ্রমণের সকল তথ্য নিয়ে গাইড লাইন।

১৪. পার্বত্য অঞ্চলের ঝর্ণা
যে কোন ঝর্ণা ও জলপ্রপাত দর্শনের জন্যে উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোতে অনেক ঝর্ণা ও জলপ্রপাত আছে। আপনি এডভেঞ্চার প্রিয় হলে এই বর্ষায় যেতে পারেন পার্বত্য এলাকায় কোন ঝর্ণা দেখতে। উল্লেখযোগ্য ঝর্ণা গুলোর মধ্যে আছে নাফাখুম জলপ্রপাত, ধুপপানি ঝর্ণা, দামতুয়া জলপ্রপাত, শুভলং ঝর্ণা
বাকলাই, জাদিপাই ঝর্ণা। তবে বর্ষায় কোন ঝর্ণায় গেলে ফ্লাশফ্লাড নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

১৫. শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ
চা বাগান, উদ্যান ও ঝর্ণা এইসবকিছুর জন্যে যেতে পারেন মৌলভীবাজার জেলায়। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ এমন জায়গা যেখানে সারাবছরই যেতে পারেন। আর বর্ষায় হামহাম ঝর্ণা পূর্ণ রূপ পায়। সবুজ চা বাগান ঘুরে দেখার পাশাপাশি ট্রেকিং এর জন্যে যেতে পারেন হামহাম ঝর্ণায়।

বর্ষাকালে বাংলাদেশের দর্শনীয় ভ্রমণ স্থানের সংখ্যা কম নয়। উপরের উল্লেখিত জায়গাগুলো এছাড়াও বর্ষাকালে আদর্শ ভ্রমণ স্থানের মধ্যে আছে কিছু জেলা ও ধরণ ভিত্তিক স্থান, বর্ষায় দেশের যে কোন হাওরে ভ্রমণ হবে আনন্দময়। জেলা ভিত্তিক স্থানের মধ্যে বর্ষাকালে সিলেটের প্রায় সব জায়গায় অন্য সময়ে থেকে বেশী সুন্দর লাগে। এছাড়া দেশের ঝর্ণা গুলো বর্ষাকালেই পূর্ণ রূপ ধারণ করে। তাই যে কোন ঝর্ণার আসল রূপ দেখতে চাইলে অবশ্যই বর্ষাকাল বা তার পরবর্তী সময়েই যাওয়া উচিত।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১৫ ভ্রমণ স্থান

আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

ষড়ঋতুর এই দেশে বর্ষা নিয়ে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। বাঙালিদের আবেগ, সাহিত্য এমনকি খাদ্যাভ্যাস জুড়ে আছে বৃষ্টি ও বর্ষার বৈচিত্রপূর্ণ আবেশ। তেমনি বর্ষাকালে ভ্রমণ করাটাও বর্ষার আরেক যাদুকরী মুগ্ধতার আনন্দময় পরিণতি।

বর্ষাকালে বাংলাদেশের সকল ভ্রমণ স্থানগুলো সমান পূর্ণতা না পেলেও কিছু কিছু দর্শনীয় স্থান যেন নতুন করে যৌবন ফিরে পায়। এমন কিছু জায়গা আছে যা শুধু বর্ষাকালেই আসল সৌন্দর্য মেলে ধরে। আর সেই সকল স্থানে ভীড় করে হাজার হাজার ভ্রমণ পাগল পর্যটক। ভ্রমণ গাইডের আজকের আয়োজনে চলুন জেনে নেয়া যাক বর্ষাকালে দেশে ভ্রমণের সেরা ১৫ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

১. টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমির নাম টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor)। সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত এই হাওরটি স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ৪৬ টি দ্বীপের মত ভাসমান গ্রাম রয়েছে। ভারতের মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণা এসে বাড়িয়েছে এই হাওরের বৈচিত্র। বর্ষাকালই হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অনেক বিলাসবহুল হাউজবোট আছে ঘুরে দেখার জন্যে এই অপরূপ সৌন্দর্য।

বিস্তারিত পড়ুন : টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইড

২. রাতারগুল, সিলেট
সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতারগুল (Ratargul) জলাবন বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন। জীববৈচিত্রে পরিপূর্ণ পৃথিবীর অন্যতম এই জলাবন বছরে ৪/৫ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। আর তখন জলে ডুবে থাকা প্রাকৃতিক বনের সৌন্দর্য দেখতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা ‘সিলেটের সুন্দরবন’ খ্যাত রাতারগুলে এসে ভিড় করেন। অনেকে আবার রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন হিসাবেও আখ্যায়িত করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।

৩. ভোলাগঞ্জ, সিলেট
বর্ষায় সিলেট অঞ্চল বেড়ানোর জন্যে উপযুক্ত সময়। বর্তমানে জনপ্রিয় ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর বেড়ানোর জন্যে এই বর্ষাকালকে বেছে নিতে পারেন। বর্ষায় পাহাড়ের ভাজে লুকিয়ে থাকা মেঘ, পাথর কোয়ারির উপর ছুটে চলা অভিরাম পানির স্রোতধারা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সিলেট থেকে খুব সহজেই একদিনে ঘুরে আসায় যায় ভোলাগঞ্জ থেকে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের ভোলাগঞ্জ ভ্রমণ গাইড।

৪. বিছনাকান্দি, সিলেট
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিছনাকান্দি (Bisnakandi) একটি পাথর কোয়ারী। পাথরের উপর বয়ে চলা কাচের মত স্বচ্ছ জলের ধারা, পাহাড়ের গায়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ির দৃশ্য এখানে আগত পর্যটকদের বিনোদিত করে। পাথরের বিছানার উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ পানিতে গা ভেজানোয় যে মানসিক প্রশান্তি আছে সেই প্রশান্তি পর্যটকদের বারবার বিছানাকান্দি নিয়ে আসে। এক কথায় বিছানাকান্দি যেন পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথরের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে।

বিস্তারিত পড়ুন : বিছনাকান্দি ভ্রমণ গাইড

৫. সাজেক, রাঙ্গামাটি
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়িতে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley) বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পর্যটন আকর্ষণ। মেঘের লুকোচুরি খেলা কিংবা মেঘ ছুঁয়ে দেখতে চাইলে সাজেকের বিকল্প নেই। রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত সাজেক ভ্যালি থেকে রাঙামাটির বেশ কিছু অংশ দেখে যায়। তাই সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়। সাজেক এমনই এক আশ্চর্য্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত প্রকৃতির এই তিন ঋতুর সান্নিধ্য অনুভব করা যায়। তাই দিন হোক কিংবা রাত সাজেক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা অপূর্ব এক ছবি।

বিস্তারিত পড়ুন : সাজেক ভ্রমণ গাইড

৬. ভাসমান বাজার, বরিশাল ও ঝালকাঠি
বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভিমরুলিতে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating Guava Market)। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে এই ভাসমান পেয়ারা বাজার। জুলাই ও আগস্ট মাস পেয়ারার মৌসুম হলেও মাঝে মাঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে ভাসমান পেয়ারার বাজার। সবচেয়ে মজার বেপার হচ্ছে এই বাজারে আসা সকল নৌকার আকার এবং নকশা প্রায় একইরকম।

৭. কক্সবাজার
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এমন একটি জায়গা যা বছরের যে কোন সময় যেতে পারেন। প্রতিটি ঋতুতে একেক রূপের দেখা পাবেন। বর্ষায় বৃষ্টিমুখর সমুদ্র সৈকতের অভিজ্ঞতা নিশ্চত খারাপ লাগবেনা আপনার। কক্সবাজার ভ্রমণ সহজ হওয়ায় যে কোন সময়ই হুট করে প্ল্যান করে চলে যেতে পারবেন।

৮. খৈয়াছড়া ঝর্ণা, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের অবস্থিত খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfall) বাংলাদেশের বৃহৎ ঝর্ণাগুলোর মধ্যে অন্যতম। নান্দ্যনিক এই ঝর্ণাতে সর্বমোট ৯ টি বড় ধাপ বা ক্যাসকেড রয়েছে। গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ আর পাহাড়ের সৌন্দর্যে অনন্য খৈয়াছড়া ঝর্ণাকে বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমীরা ‘ঝর্ণা রানী’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। বাঁশের সাকো, সবুজ শস্যের ক্ষেত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ ও ঝিরি পেরিয়ে খৈয়াছড়া ঝর্ণার সামনে এসে দাঁড়ালে পথের সমস্ত ক্লান্তি যেন নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আর শরীরে ঝর্ণার শীতল জলের স্পর্শ এক অপার্থিব প্রশান্তিতে মনকে ভরিয়ে তোলে। সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ঝর্ণা রয়েছে।

বিস্তারিত পড়ুন : খৈয়াছড়া ভ্রমণ গাইড

৯. কাপ্তাই লেক, রাঙ্গামাটি
কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake) পার্বত্য সৌন্দর্যের রুপের রানী রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত। অথৈ জলরাশি, পাহাড় এবং চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহে ঘেরা ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত কাপ্তাই লেক আয়তনের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ একটি কৃত্রিম হ্রদ। ১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করা হলে কাপ্তাই লেকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অফুরন্ত জীববৈচিত্রে পূর্ণ কাপ্তাই লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, অসংখ্য পাখি এবং হ্রদ কেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

১০. নীলগিরি, বান্দরবান
বান্দরবানের নীলগিরি (Nilgiri) পাহাড়চূড়ায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কতৃক পরিচালিত নীলগিরি ইতিমধ্যেই ‘বাংলার দার্জিলিং’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ার কারণে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে সর্বদাই থাকে মেঘের উপস্থিতি। নীলগিরির চূড়া থেকে সারি সারি পাহাড়ের পাশাপাশি আকাশ পরিস্কার থাকলে বগালেক, কেওক্রাডং, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদী দেখা যায়। বছরজুড়েই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এই পর্যটক কেন্দ্রে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে।

১১. নীলাচল, বান্দরবান
বান্দরবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে কাছে টাইগার পাড়ায় নীলাচল (Nilachol) অবস্থিত। দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ে ঘেরা চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাখির চোখে বান্দরবানকে দেখতে চাইলে নীলাচলের জুড়ি নেই। দূরের পাহাড়ের ঢালের আঁকা-বাঁকা পথ, আদিবাসী নিবাস আর রূপালী নদী যেন কোন শিল্পীর আঁকা রঙিন ছবির ক্যানভাস। আর বর্ষাকালে নীলাচলে আসলে মেঘের ভেতর দিয়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। নীলাচল থেকে সুন্দর সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। আর পূর্নিমার রাতে নীলাচলের চারপাশের পরিবেশ যেন এক অপার্থিব জগতে নিয়ে যায়।

বিস্তারিত পড়ুন : নীলাচন ভ্রমণ গাইড

১২. গুলিয়াখালী সৈকত, চট্টগ্রাম
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত (Guliakhali Sea Beach) স্থানীয় মানুষের কাছে ‘মুরাদপুর বীচ’ নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতকে সাজাতে প্রকৃতিও যেন কোনরূপ কৃপনতা করেনি। সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া সমুদ্র সৈকত, কেওড়া বন এবং একই সাথে সোয়াম্প ফরেস্ট (জলাবন) ও ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য দেখার অভিজ্ঞতা এখানে আগত পর্যটকদের বিমোহিত করে। এছাড়া গুলিয়াখালীতে আছে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা।

১৩. কিশোরগঞ্জ হাওর
বর্ষায় ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত হতে পারে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চল। অথৈই জলে ভেসা থাকা ছোট ছোট গ্রামীন জনপদ, সেই সাথে জনপ্রিয় মিঠামইন-অষ্টগ্রাম হাওর রোড ভ্রমণের জন্যে যেতে পারেন কিশোরগঞ্জ। ঢাকা থেকে কাছে হওয়ায় একদিনেই ঘুরে আসা যায় নিকলী-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর। বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের মিঠামইন অষ্টগ্রাম হাওর রোড ভ্রমণের সকল তথ্য নিয়ে গাইড লাইন।

১৪. পার্বত্য অঞ্চলের ঝর্ণা
যে কোন ঝর্ণা ও জলপ্রপাত দর্শনের জন্যে উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোতে অনেক ঝর্ণা ও জলপ্রপাত আছে। আপনি এডভেঞ্চার প্রিয় হলে এই বর্ষায় যেতে পারেন পার্বত্য এলাকায় কোন ঝর্ণা দেখতে। উল্লেখযোগ্য ঝর্ণা গুলোর মধ্যে আছে নাফাখুম জলপ্রপাত, ধুপপানি ঝর্ণা, দামতুয়া জলপ্রপাত, শুভলং ঝর্ণা
বাকলাই, জাদিপাই ঝর্ণা। তবে বর্ষায় কোন ঝর্ণায় গেলে ফ্লাশফ্লাড নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

১৫. শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ
চা বাগান, উদ্যান ও ঝর্ণা এইসবকিছুর জন্যে যেতে পারেন মৌলভীবাজার জেলায়। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ এমন জায়গা যেখানে সারাবছরই যেতে পারেন। আর বর্ষায় হামহাম ঝর্ণা পূর্ণ রূপ পায়। সবুজ চা বাগান ঘুরে দেখার পাশাপাশি ট্রেকিং এর জন্যে যেতে পারেন হামহাম ঝর্ণায়।

বর্ষাকালে বাংলাদেশের দর্শনীয় ভ্রমণ স্থানের সংখ্যা কম নয়। উপরের উল্লেখিত জায়গাগুলো এছাড়াও বর্ষাকালে আদর্শ ভ্রমণ স্থানের মধ্যে আছে কিছু জেলা ও ধরণ ভিত্তিক স্থান, বর্ষায় দেশের যে কোন হাওরে ভ্রমণ হবে আনন্দময়। জেলা ভিত্তিক স্থানের মধ্যে বর্ষাকালে সিলেটের প্রায় সব জায়গায় অন্য সময়ে থেকে বেশী সুন্দর লাগে। এছাড়া দেশের ঝর্ণা গুলো বর্ষাকালেই পূর্ণ রূপ ধারণ করে। তাই যে কোন ঝর্ণার আসল রূপ দেখতে চাইলে অবশ্যই বর্ষাকাল বা তার পরবর্তী সময়েই যাওয়া উচিত।