নতুন শুল্ক আরোপ স্থগিত করলো চীন-যুক্তরাষ্ট্র

- আপডেট সময় : ০৭:৩০:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের পণ্যের ওপর তিন অঙ্কের শুল্ক স্থগিত আরও ৯০ দিনের জন্য বৃদ্ধি করেছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ভোরে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ওপর ৯০ দিনের জন্য মার্কিন সংস্থাগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ স্থগিত করে। অন্যদিকে গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা করেছেন, তিনি চলতি বছর ১০ নভেম্বর রাত ১২টা ০১ মিনিট পর্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ স্থগিত রেখে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। বেইজিং এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে শুল্ক চুক্তি আজ মঙ্গলবার রাত ১২:০১ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা ছিলো।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে বাণিজ্য পারস্পরিকতার অভাব এবং এর ফলে সৃষ্ট জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
নতুন আদেশ অনুসারে, চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে না, অপরদিকে মার্কিন পণ্যের ওপর চীনা শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি ঘোষণাটিও স্থগিত থাকবে। আপাতত চীনা আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চলমান ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ থাকবে। অন্যদিকে মার্কিন আমদানির ওপর চলমান চীনা ১০ শতাংশ শুল্ক থাকবে
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ বৃদ্ধির স্থগিতের ঘোষণা উভয়দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি সঞ্চার হয়েছে। চীনের রোবোটিক্স কোম্পানিতে কর্মরত ৩৯ বছর বয়সী পেশাদার ওয়াং মিংগুয়ে বলে, আমি মনে করি, চীন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত দেখতে চায়। কিন্তু উভয়দেশের বর্তমান যে পদ্ধতি গ্রহণ করছে এখনও ঝুঁকি রয়েছে।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে সিএনবিসিকে বলেছিলেন, আমেরিকা ও চীন একটি বাণিজ্য চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে। যদি কোনও চুক্তি হয় তবে তিনি বছরের শেষের আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র সাথে দেখা করবেন।
গত মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনার পর চীন- যুক্তরাষ্ট্র উভয়পক্ষ তাদের বাণিজ্য শুল্ক স্থগিত করে। আরও আলোচনার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়। এরপর জুলাইয়ের শেষের দিকে উভয়পক্ষ সুইডেনের স্টকহোমে আবার আলোচনায় বসে। এই বৈঠকের পর মার্কিন আলোচকরা ট্রাম্পের সময়সীমা আবারও বাড়ানোর সুপারিশ করেন।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বারবার বলেছেন, বসন্তে উভয়পক্ষ একে অপরের পণ্যের ওপর যে তিন অঙ্কের আমদানি শুল্ক আরোপ করেছিল- তা অগ্রহণযোগ্য। ট্রাম্প সম্ভবত মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হওয়ার আগে চীনকে আরও ছাড়ের জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
রোববার ট্রাম্প অতিরিক্ত ছাড়ের জন্য চাপ দেন এবং চীনকে সয়াবিন ক্রয় চারগুণ করার আহ্বান জানান। যদিও বিশ্লেষকরা এই ধরনের চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু গতকাল সোমবার ট্রাম্প এই দাবির পুনরাবৃত্তি করেননি।
বেইজিংয়ের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ জু তিয়ানচেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আরও উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য ক্রয় করা উচিত। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনিচ্ছুক।
জু আরও বলেন, চীনা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক শিথিল করতে ট্রাম্পের অস্বীকৃতি ইঙ্গিত দেয়, উভয়পক্ষই বিশ্বাস করে তারা বাণিজ্য ধাক্কা সহ্য করতে পারবে। যদি (ট্রাম্প) উত্তেজনা বাড়ান, তাহলে চীনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে তাকে লড়াই করতে হবে, যার খেলার জন্য অনেক তাস আছে।’
দেশটির সর্বশেষ বাণিজ্য তথ্য অনুসারে, গত মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি বার্ষিক ২১.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রপ্তানি ১৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত পৃথক মার্কিন তথ্যে দেখা গেছে, জুন মাসে চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি ২১ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।- রয়টার্স।