ঢাকা ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পর্যটন, শিক্ষা, বিমান খাতে ‘প্রত্যাহার’

তুরস্ক থেকে সরে যাচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪ বার পড়া হয়েছে

রেচেপ তাইপ এরদোয়ান ও নরেন্দ্র মোদী

অপারেশন সিঁদুরে ভারতের বদলে পাকিস্তানকে সমর্থন, ড্রোন দেওয়া সহ নানা কারণে তুরস্কের ওপর ক্ষোভ জন্মেছে ভারতীয়দের। তারই প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে ‘বয়কট তুরস্ক’ ট্রেন্ড হতে শুরু হয়েছে। ইউরোপের দেশটিতে পর্যটন, শিক্ষা, বিমান খাত থেকে সরে আসছে ভারতের জনগণ।

বয়কটের এই প্রতিফলন সবার আগে দেখা যায় পর্যটনে। ভারতের সরকারি ও ইন্ডাস্ট্রির তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুনে ভারত থেকে তুরস্কে গিয়েছিলেন ৩৮,৩০৭ জন। ২০২৫-এর জুনে সেটা নেমে ২৪,২৫০ জনে। এক বছরে প্রায় ৩৭% কমেছে এই প্রবাহ। 

এপ্রিল-জুনে একের পর এক টিকিট বাতিল করা হয়। মে মাসে তা বাড়ে কয়েকগুণ। বড় বড় ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম বুকিং ঠেকায়, পেজ থেকে প্রচার সরায়, এমনকি কেউ কেউ প্রকাশ্যেই ‘অপ্রয়োজনীয়’ তুরস্ক ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়। কলকাতার পুজো মৌসুমে অন্তত ১,৫০০ ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে—শুধু এই শহর থেকেই তুরস্কের সম্ভাব্য আয় খসে পড়েছে ৬০-৭৫ কোটি টাকা। 

উত্তরপ্রদেশের কানপুরে কয়েকটি বড় গ্রুপ ট্যুর মিলিয়ে বাতিলের অঙ্ক ৩৫ লাখের মতো। ভারতীয়দের অংশ মোট তুর্কি পর্যটন আয়ের মাত্র ০.৬%। বিয়েবাড়ি, ডেস্টিনেশন শুট, বিলাসভ্রমণ—এই ‘হাই-এন্ড’ সেগমেন্টে ভারতীয়দের খরচ বড়; হাজার হাজার বুকিং ঝরে পড়ায় আঘাতটা চোখে পড়ার মতো।

২০১৯ সালে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২.৩ লাখ, ২০২৪-এ উঠেছিল ২.৭ লাখে। চলতি বছরে এখনই প্রায় ৮৫ হাজার কম। এ ধারা চললে হিসেব আরও খারাপ হবে।

পর্যটনের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও সরে আসার ছবি স্পষ্ট। দিল্লি ও মুম্বাইয়ের কিছু নামী বিশ্ববিদ্যালয় তুর্কি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা সমঝোতা ও ছাত্রবিনিময় কর্মসূচি ‘স্থগিত/বাতিল’ করেছে। কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জাতীয় স্বার্থ। তাতে তুরস্কগামী ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপ, গাইডেন্স, ভিসা প্রসেস— সবই অনিশ্চিত হয়েছে।

সবচেয়ে ‘কঠিন’ বার্তা গেছে বিমান পরিবহণে। একাধিক ভারতীয় বিমানবন্দরে কাজ করা তুর্কি মালিকানাধীন গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সংস্থার নিরাপত্তা অনুমোদন খারিজ করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক মনে করছে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ছাড় দেওয়ার জায়গা নেই। একই সময়ে তুর্কি অংশীদারির উপর দাঁড়ানো কিছু লিজ বা কোডশেয়ার বন্দোবস্তও চাপের মুখে।

অপারেশনাল ঝুঁকি, রেগুলেটরি সতর্কতা আর জনমতের সমীকরণ একসঙ্গে কাজ করছে। শিল্পমহল বলছে, এটি ‘মার্কেট-সিগন্যাল’ যে দেশের অবস্থান ভারতের মূল স্বার্থের বিরুদ্ধে, সেখানে ভারত তার বৃহৎ ভোক্তা ও যাত্রীশক্তিকে নীরব অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ভারত বাস্তব খাতে তুরস্ক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

পর্যটন, শিক্ষা, বিমান খাতে ‘প্রত্যাহার’

তুরস্ক থেকে সরে যাচ্ছে ভারত

আপডেট সময় : ০২:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

অপারেশন সিঁদুরে ভারতের বদলে পাকিস্তানকে সমর্থন, ড্রোন দেওয়া সহ নানা কারণে তুরস্কের ওপর ক্ষোভ জন্মেছে ভারতীয়দের। তারই প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে ‘বয়কট তুরস্ক’ ট্রেন্ড হতে শুরু হয়েছে। ইউরোপের দেশটিতে পর্যটন, শিক্ষা, বিমান খাত থেকে সরে আসছে ভারতের জনগণ।

বয়কটের এই প্রতিফলন সবার আগে দেখা যায় পর্যটনে। ভারতের সরকারি ও ইন্ডাস্ট্রির তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুনে ভারত থেকে তুরস্কে গিয়েছিলেন ৩৮,৩০৭ জন। ২০২৫-এর জুনে সেটা নেমে ২৪,২৫০ জনে। এক বছরে প্রায় ৩৭% কমেছে এই প্রবাহ। 

এপ্রিল-জুনে একের পর এক টিকিট বাতিল করা হয়। মে মাসে তা বাড়ে কয়েকগুণ। বড় বড় ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম বুকিং ঠেকায়, পেজ থেকে প্রচার সরায়, এমনকি কেউ কেউ প্রকাশ্যেই ‘অপ্রয়োজনীয়’ তুরস্ক ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়। কলকাতার পুজো মৌসুমে অন্তত ১,৫০০ ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে—শুধু এই শহর থেকেই তুরস্কের সম্ভাব্য আয় খসে পড়েছে ৬০-৭৫ কোটি টাকা। 

উত্তরপ্রদেশের কানপুরে কয়েকটি বড় গ্রুপ ট্যুর মিলিয়ে বাতিলের অঙ্ক ৩৫ লাখের মতো। ভারতীয়দের অংশ মোট তুর্কি পর্যটন আয়ের মাত্র ০.৬%। বিয়েবাড়ি, ডেস্টিনেশন শুট, বিলাসভ্রমণ—এই ‘হাই-এন্ড’ সেগমেন্টে ভারতীয়দের খরচ বড়; হাজার হাজার বুকিং ঝরে পড়ায় আঘাতটা চোখে পড়ার মতো।

২০১৯ সালে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২.৩ লাখ, ২০২৪-এ উঠেছিল ২.৭ লাখে। চলতি বছরে এখনই প্রায় ৮৫ হাজার কম। এ ধারা চললে হিসেব আরও খারাপ হবে।

পর্যটনের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও সরে আসার ছবি স্পষ্ট। দিল্লি ও মুম্বাইয়ের কিছু নামী বিশ্ববিদ্যালয় তুর্কি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা সমঝোতা ও ছাত্রবিনিময় কর্মসূচি ‘স্থগিত/বাতিল’ করেছে। কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জাতীয় স্বার্থ। তাতে তুরস্কগামী ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপ, গাইডেন্স, ভিসা প্রসেস— সবই অনিশ্চিত হয়েছে।

সবচেয়ে ‘কঠিন’ বার্তা গেছে বিমান পরিবহণে। একাধিক ভারতীয় বিমানবন্দরে কাজ করা তুর্কি মালিকানাধীন গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সংস্থার নিরাপত্তা অনুমোদন খারিজ করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক মনে করছে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ছাড় দেওয়ার জায়গা নেই। একই সময়ে তুর্কি অংশীদারির উপর দাঁড়ানো কিছু লিজ বা কোডশেয়ার বন্দোবস্তও চাপের মুখে।

অপারেশনাল ঝুঁকি, রেগুলেটরি সতর্কতা আর জনমতের সমীকরণ একসঙ্গে কাজ করছে। শিল্পমহল বলছে, এটি ‘মার্কেট-সিগন্যাল’ যে দেশের অবস্থান ভারতের মূল স্বার্থের বিরুদ্ধে, সেখানে ভারত তার বৃহৎ ভোক্তা ও যাত্রীশক্তিকে নীরব অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ভারত বাস্তব খাতে তুরস্ক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।