ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একদিনে ঘুরে আসুন জাতীয় স্মৃতিসৌধ

শিক্ষা ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:০৯:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

আপনি যদি ঢাকা শহরের ব্যস্ততা থেকে পালিয়ে একদিনের জন্য একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে চান। সঙ্গে যদি ইতিহাসের ছোঁয়া নিতে চান। কিংবা প্রকৃতির প্রশান্তি আর নিরিবিলি সময় কাটানোর সুযোগ পেতে চান। তাহলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ হতে পারে আপনার জন্য একেবারে উপযুক্ত জায়গা।

ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধের দূরত্ব মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টা। গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে বাসে উঠলেই সাভার। ভাড়া খুব বেশি নয়। লোকাল বাসে ৫০-৬০ টাকা। যদি ব্যক্তিগত গাড়ি থাকে, তাহলে আরও সুবিধা। সকালে রওয়ানা দিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। একদিনেই মানসিক বিশ্রাম নিয়ে ফিরতে পারবেন।

যা দেখবেন
এটি শুধু একটি স্মারক স্থাপনা নয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। আমাদের আবেগের, গর্বের প্রতীক। বিশাল সবুজ মাঠের একপাশে দাঁড়ানো উঁচু সাতটি স্তম্ভ। যা আমাদের স্বাধীনতার সাতটি ধাপকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথম দেখাতেই মনে পড়ে, সেই ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ নারীর আত্মত্যাগ। মূল সৌধ পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে দেখবেন, কত গোছানো, কত পরিচ্ছন্ন জায়গাটা। কোনো জায়গায় ময়লা নেই, ভিড় থাকলেও শৃঙ্খলার এক ভিন্ন আবহ।

স্মৃতিসৌধের পাশেই আছে একটি সুন্দর মায়াবী লেক। লেকের জলে সৌধের প্রতিচ্ছবি পড়ে যেন আরেকটি সৌধ তৈরি হয় জলের গায়ে। অনেকেই এখানে এসে বসে থাকেন—কেউ একা, কেউ পরিবার নিয়ে। হালকা হাওয়া, নীরবতা আর পাখির ডাক—সব মিলিয়ে পরিবেশ একদম শান্ত।

অনেকেই শুধু স্মৃতিসৌধ দেখে ফিরে যান। তারা কিন্তু অনেক কিছু মিস করেন। পুরো চত্বরটা ঘুরে দেখতে পারেন—চমৎকার বাগান আছে, গাছের ছায়া আছে, পাখিদের আনাগোনা আছে। রোদের দিনেও বসে থাকা যায়, এতটাই ছায়া আর বাতাসের ব্যবস্থা আছে। বিশেষ করে বিকেলে সৌধের ছায়া যখন লম্বা হয়ে পড়ে, সূর্যটা একটু ঢলে যায় পশ্চিমে; তখন জায়গাটা আরও সুন্দর লাগে। যদি ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাহলে বিকেলটা মিস করবেন না।

আবার অনেকেই জানেন না, স্মৃতিসৌধের পাশেই আছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু তথ্যচিত্র, ছবি আর দলিল নিয়ে সাজানো ছোট গ্যালারি। এ ছাড়া অজানা শহীদদের কবর। সময় নিয়ে চাইলে সেখানে ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে যাওয়া যায় স্মৃতিসৌধে। শিক্ষার্থী কিংবা সন্তানদের জন্য স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ একটি শিক্ষা সফরের মতো।

প্রবেশে সময়সূচি
স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করতে কোনো টিকিট লাগে না। এ ছাড়া সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। কিছু সময় বিশেষ দিবসে বা নিরাপত্তার কারণে ভেতরে যাওয়া বন্ধ থাকে কিন্তু সাধারণ সময় গেলে কোনো সমস্যা হয় না।

খাবার
পাশেই কিছু দোকান আছে। চাইলে বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে যেতে পারেন। ছোটখাটো একটা পিকনিকও হয়ে যাবে। আশপাশে চিপস, পানি, কোমলপানীয় পাওয়া যায়। প্লাস্টিক বা ময়লা ফেলে যাওয়া একদমই ঠিক নয়। তাই এসব নিজের ব্যাগেই রাখবেন। ওয়াশরুম, বসার জায়গা, পানি—সবই আছে।

কেন যাবেন
স্মৃতিসৌধ বারবার যাওয়ার মতো স্থান। ভিন্ন সময় গেলে ভিন্ন সৌন্দর্য দেখবেন। কখনো সকালে, কখনো বিকেলে, কখনো ফুল ফোটার সময়ে। একদিনের ছোট ট্রিপে এমন জায়গা খুব কম আছে। যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি আর প্রশান্তি—সব একসাথে পাওয়া যায়। যারা ঘোরাঘুরির পাশাপাশি একটু নিজেকে সময় দিতে চান, তাদের জন্য তো জায়গাটি একরকম ওষুধের মতো।

তাই মনটা ক্লান্ত থাকলে, চারপাশে শুধু শব্দ আর চাপ থাকলে একদিন সময় বের করুন। পরিবার, বন্ধু বা একা—যেভাবেই হোক, চলে যান জাতীয় স্মৃতিসৌধে। স্মৃতিসৌধের নিরিবিলি প্রকৃতি, গর্বের ইতিহাস আর কিছুটা নীরব সময়—আপনাকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

একদিনে ঘুরে আসুন জাতীয় স্মৃতিসৌধ

আপডেট সময় : ০৬:০৯:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

আপনি যদি ঢাকা শহরের ব্যস্ততা থেকে পালিয়ে একদিনের জন্য একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে চান। সঙ্গে যদি ইতিহাসের ছোঁয়া নিতে চান। কিংবা প্রকৃতির প্রশান্তি আর নিরিবিলি সময় কাটানোর সুযোগ পেতে চান। তাহলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ হতে পারে আপনার জন্য একেবারে উপযুক্ত জায়গা।

ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধের দূরত্ব মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টা। গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে বাসে উঠলেই সাভার। ভাড়া খুব বেশি নয়। লোকাল বাসে ৫০-৬০ টাকা। যদি ব্যক্তিগত গাড়ি থাকে, তাহলে আরও সুবিধা। সকালে রওয়ানা দিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। একদিনেই মানসিক বিশ্রাম নিয়ে ফিরতে পারবেন।

যা দেখবেন
এটি শুধু একটি স্মারক স্থাপনা নয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। আমাদের আবেগের, গর্বের প্রতীক। বিশাল সবুজ মাঠের একপাশে দাঁড়ানো উঁচু সাতটি স্তম্ভ। যা আমাদের স্বাধীনতার সাতটি ধাপকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথম দেখাতেই মনে পড়ে, সেই ৩০ লাখ প্রাণ আর ২ লাখ নারীর আত্মত্যাগ। মূল সৌধ পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে দেখবেন, কত গোছানো, কত পরিচ্ছন্ন জায়গাটা। কোনো জায়গায় ময়লা নেই, ভিড় থাকলেও শৃঙ্খলার এক ভিন্ন আবহ।

স্মৃতিসৌধের পাশেই আছে একটি সুন্দর মায়াবী লেক। লেকের জলে সৌধের প্রতিচ্ছবি পড়ে যেন আরেকটি সৌধ তৈরি হয় জলের গায়ে। অনেকেই এখানে এসে বসে থাকেন—কেউ একা, কেউ পরিবার নিয়ে। হালকা হাওয়া, নীরবতা আর পাখির ডাক—সব মিলিয়ে পরিবেশ একদম শান্ত।

অনেকেই শুধু স্মৃতিসৌধ দেখে ফিরে যান। তারা কিন্তু অনেক কিছু মিস করেন। পুরো চত্বরটা ঘুরে দেখতে পারেন—চমৎকার বাগান আছে, গাছের ছায়া আছে, পাখিদের আনাগোনা আছে। রোদের দিনেও বসে থাকা যায়, এতটাই ছায়া আর বাতাসের ব্যবস্থা আছে। বিশেষ করে বিকেলে সৌধের ছায়া যখন লম্বা হয়ে পড়ে, সূর্যটা একটু ঢলে যায় পশ্চিমে; তখন জায়গাটা আরও সুন্দর লাগে। যদি ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাহলে বিকেলটা মিস করবেন না।

আবার অনেকেই জানেন না, স্মৃতিসৌধের পাশেই আছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু তথ্যচিত্র, ছবি আর দলিল নিয়ে সাজানো ছোট গ্যালারি। এ ছাড়া অজানা শহীদদের কবর। সময় নিয়ে চাইলে সেখানে ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে যাওয়া যায় স্মৃতিসৌধে। শিক্ষার্থী কিংবা সন্তানদের জন্য স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ একটি শিক্ষা সফরের মতো।

প্রবেশে সময়সূচি
স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করতে কোনো টিকিট লাগে না। এ ছাড়া সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। কিছু সময় বিশেষ দিবসে বা নিরাপত্তার কারণে ভেতরে যাওয়া বন্ধ থাকে কিন্তু সাধারণ সময় গেলে কোনো সমস্যা হয় না।

খাবার
পাশেই কিছু দোকান আছে। চাইলে বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে যেতে পারেন। ছোটখাটো একটা পিকনিকও হয়ে যাবে। আশপাশে চিপস, পানি, কোমলপানীয় পাওয়া যায়। প্লাস্টিক বা ময়লা ফেলে যাওয়া একদমই ঠিক নয়। তাই এসব নিজের ব্যাগেই রাখবেন। ওয়াশরুম, বসার জায়গা, পানি—সবই আছে।

কেন যাবেন
স্মৃতিসৌধ বারবার যাওয়ার মতো স্থান। ভিন্ন সময় গেলে ভিন্ন সৌন্দর্য দেখবেন। কখনো সকালে, কখনো বিকেলে, কখনো ফুল ফোটার সময়ে। একদিনের ছোট ট্রিপে এমন জায়গা খুব কম আছে। যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি আর প্রশান্তি—সব একসাথে পাওয়া যায়। যারা ঘোরাঘুরির পাশাপাশি একটু নিজেকে সময় দিতে চান, তাদের জন্য তো জায়গাটি একরকম ওষুধের মতো।

তাই মনটা ক্লান্ত থাকলে, চারপাশে শুধু শব্দ আর চাপ থাকলে একদিন সময় বের করুন। পরিবার, বন্ধু বা একা—যেভাবেই হোক, চলে যান জাতীয় স্মৃতিসৌধে। স্মৃতিসৌধের নিরিবিলি প্রকৃতি, গর্বের ইতিহাস আর কিছুটা নীরব সময়—আপনাকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।