হার্ভার্ডের তত্ত্বের বিরোধিতা বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর
এলিয়েন নয়, প্রাকৃতিক উৎস থেকেই এসেছে 3I/ATLAS

- আপডেট সময় : ০৬:২১:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৫ বার পড়া হয়েছে
মহাজাগতিক বস্তু 3I/ATLAS নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ বিজ্ঞান অঙ্গনে তৈরি হয়েছে তুমুল বিতর্ক। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি হতে পারে এলিয়েন প্রযুক্তির অংশ। তবে এর বিপরীতে SETI Institute-এর সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী তুলে ধরেছেন এক নতুন যুক্তিনির্ভর তত্ত্ব। তার দাবি, এই বস্তুটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং এসেছে এক দূরবর্তী সৌরজগত থেকে।
এলিয়েন তত্ত্ব:
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. অ্যাভি লএব (Avi Loeb) সম্প্রতি দাবি করেন, 3I/ATLAS হতে পারে বুদ্ধিমান ভিনগ্রহবাসীদের তৈরি কোনো স্পেস প্রোব বা মহাকাশযান। তার মতে, এই বস্তুটির গতিপথ, গতি এবং গঠনের ধরণ এটিকে কোনো সাধারণ ধূমকেতু বা গ্রহাণু থেকে আলাদা করে তোলে। এতে থাকতে পারে কৃত্রিম প্রযুক্তির চিহ্ন।
পাল্টা তত্ত্ব:
৫ আগস্ট EarthArXiv-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. একেএম এহসানুল হক সরাসরি এই এলিয়েন তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তুলে ধরেছেন এক প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা। তিনি যুক্তি দিয়েছেন— বস্তুটির গঠনে বা গতিপথে কোনো কৃত্রিম নকশার চিহ্ন পাওয়া যায় না।
ড. এহসানুল হকের বক্তব্য হলো- “আমার গবেষণা প্রমাণ করে, মহাজাগতিক রহস্য ব্যাখ্যায় প্রমাণভিত্তিক বিজ্ঞানের গুরুত্ব কতটা বেশি। আমি একটি প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেছি; যা অ্যাস্ট্রোজিওলজি ও জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তিতে গঠিত। এতে আমি হার্ভার্ডের ভাইরাল হওয়া ‘এলিয়েন তত্ত্ব’-এর মোকাবেলা করেছি এবং ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট সম্পর্কে নতুন বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ায় অবদান রাখার চেষ্টা করেছি।’’
‘‘এই গবেষণা শুধু আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধই করে না, বরং বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের ভূবিজ্ঞান ও গ্রহবিজ্ঞান ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা তুলে ধরে। আমি আশা করি, এটি তরুণ বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের বড় স্বপ্ন দেখাতে এবং মহাকাশ বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তুলবে।”
ড. এহসানুল হকের গবেষণার শিরোনাম: “Natural Origins of 3I/ATLAS: Why 3I/ATLAS is Not an Alien”
গবেষণার মূল বিষয়গুলো হলো-
১. এই বস্তুটির গতি ও কক্ষপথ প্রাকৃতিক মাধ্যাকর্ষণ বল দিয়েই ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
২. এর গঠন ও গতিপ্রকৃতি এমন, যা দূরবর্তী কোনো সৌরজগত থেকে প্রাকৃতিকভাবে নির্গত বস্তুতে দেখা যায়।
৩. এর আচরণ ব্যাখ্যা করতে কোনো এলিয়েন প্রযুক্তি বা বুদ্ধিমান নকশার প্রয়োজন নেই।
তার এই গবেষণা বর্তমানে Dr. Avi Loeb-এর ‘এলিয়েন তত্ত্ব’-এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী হাতে গোনা কয়েকটি পাল্টা বৈজ্ঞানিক অবস্থানের একটি। এটি একটি যুক্তিনির্ভর ও পদার্থবিদ্যা-ভিত্তিক ব্যাখ্যা, যা এই বিতর্কে নতুন দৃষ্টিকোণ এবং স্পষ্টতা নিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, ড. এহসানুল হকই এই মুহূর্তে একমাত্র বাংলাদেশি বিজ্ঞানী যিনি সরাসরি 3I/ATLAS নিয়ে গবেষণায় যুক্ত আছেন এবং বিশ্বজুড়ে যেসব গবেষক ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
বিশ্বখ্যাত SETI Institute-এর সঙ্গে তার সংযুক্তি তাকে গভীর মহাকাশ গবেষণার এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্থান করে দিয়েছে।
ড. এহসানুল হক বলেন, ‘আমি আশা করি, এই কাজ তরুণ বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের বড় স্বপ্ন দেখতে এবং মহাকাশ বিজ্ঞানে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উৎসাহ দেবে। আমাদের তরুণদের বুঝতে হবে— মহাকাশ বিজ্ঞানে বাংলাদেশ থেকেও অবদান রাখা সম্ভব, এটা এখন কল্পনা নয়বাস্তবতা।