আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ২০০১ সালে মার্কিন অভিযানের সময় আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড় থেকে নারীর বেশে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআইকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড়ে আল–কায়েদার নেতা লাদেনসহ অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ওই অভিযান চালিয়েছিল মার্কিন বাহিনী।
কিরিয়াকু ১৫ বছর সিআইএতে কাজ করেছেন। পাকিস্তানে সিআইএর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রধান ছিলেন তিনি। এনএআইয়ের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কিরিয়াকু বলেন, তাঁরা জানতেন না যে সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের দোভাষী আসলে ‘আল-কায়েদার সদস্য’ ছিলেন। তিনি পরিচয় লুকিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়েছিলেন।কিরিয়াকু বলেন, ‘আল–কায়েদা নেতা দোভাষীর মাধ্যমে প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনারা কি আমাদের ভোর পর্যন্ত সময় দিতে পারেন? আমরা প্রথমে নারী ও শিশুদের সরিয়ে দেব, তারপর নিচে নেমে আসব এবং আত্মসমর্পণ করব।” দোভাষী তখন জেনারেল ফ্র্যাঙ্কসকে (সেন্ট্রাল কমান্ডের তৎকালীন কমান্ডার) দাবিটি মেনে নিতে রাজি করিয়ে ফেলেন। তবে শেষ পর্যন্ত যা ঘটল, তা হলো বিন লাদেন নারীর বেশে অন্ধকারের মধ্যে পিকআপ ট্রাকের পেছনে করে পাকিস্তানে পালিয়ে যান।’
কিরিয়াকু আরও বলেন, ভোরের আলো ফোটার পর তোরা বোরা পাহাড়ে আত্মসমর্পণ করার মতো কেউ ছিলেন না। তাঁরা সবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমাদের লড়াইটা পাকিস্তান পর্যন্ত সরিয়ে নিতে হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে (৯/১১) সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড়ে আল-কায়েদা সদস্যদের কোণঠাসা করার পর তাঁরা পাকিস্তানে পালিয়ে যান। পরে যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের উত্তরে অবস্থিত অ্যাবোটাবাদ শহরে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পায়। ২০১১ সালের ২ মে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে।
ওই অভিযান এবং সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে এএনআইয়ের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কিরিয়াকু। আর তখনই তিনি বিন লাদেনের নারীবেশে পালিয়ে যাওয়ার দাবিটি করেছেন।
পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের নাম উল্লেখ করে সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র মূলত ‘মোশাররফকে কিনে নিয়েছিল’।
কিরিয়াকু বলেন, ‘পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। তখন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় ছিলেন। সত্যি কথা বলতে, যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরশাসকদের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করে। তখন আর জনগণের মতামত বা সংবাদমাধ্যম নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমরা মূলত মোশাররফকে কিনে নিয়েছিলাম। আমরা কোটি কোটি ডলার সহায়তা দিতাম। সামরিক কাজের জন্যই হোক বা অর্থনৈতিক উন্নয়নকাজের জন্যই হোক, সহায়তা দেওয়া হতো।’সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নিয়মিত মোশাররফের সঙ্গে দেখা করতাম। সপ্তাহে কয়েকবার দেখা হতো। তিনি আমরা যা করতে চাই, তা–ই আমাদের করতে দিতেন। হ্যাঁ, তবে মোশাররফেরও নিজস্ব কিছু মানুষ ছিল, যাঁদের তাঁর সামলাতে হতো।’
কিরিয়াকু আরও বলেছেন, ‘পারভেজ মোশাররফকে তাঁর দেশের সেনাবাহিনীকে সন্তুষ্ট রাখতে হতো। আর সেনাবাহিনী আল-কায়েদা নিয়ে ভাবত না; তারা ভাবত ভারত নিয়ে। তাই সেনাবাহিনীকে সন্তুষ্ট রাখতে এবং কিছু চরমপন্থীকে সন্তুষ্ট রাখতে, তাঁকে সাংঘর্ষিক ভূমিকা পালন করতে হতো।’
এক প্রশ্নের জবাবে কিরিয়াকু বলেন, আল-কায়েদা ও আফগানিস্তানের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত ছিল। ভারতীয় উদ্বেগের দিকে তাঁদের মনোযোগ ছিল না।









