সিনেট পুর্নগঠনে নিষ্ক্রিয় জাবি প্রশাসন, জুলাই বিরোধীদের আমন্ত্রণ সিনেটে

- আপডেট সময় : ০৯:১৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
- / ৪৫ বার পড়া হয়েছে
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও সিনেট সদস্যদের পুনর্গঠনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিনেটে থাকা অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারী আওয়ামীপন্থীদের নিয়েই সিনেট অধিবেশন হতে যাচ্ছে। আজ শনিবার (২৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৩ টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মোট ৯৩ জন। এর মধ্যে বর্তমানে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ না থাকায় সংসদ থেকে স্পীকার কর্তৃক মনোনীত ৫ জন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থেকে ৫ জনসহ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত পাঁচ কলেজ অধ্যক্ষের মধ্যে দুইজনের অর্থাৎ মোট ১২ টি আসন শূন্য রয়েছে। বাকি ৮১ জন সিনেট সদস্য নিয়ে আগামীকালের সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিনেট অধিবেশনে সিনেট সদস্য হিসেবে দাওয়াত পেয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিরোধী আওয়ামী দোসরের একাধিক ব্যক্তি। দাওয়াত পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে হলেন, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ ও আওয়ামী লীগের মনোনীত গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহের হোসেন মোল্লা, সেচ্ছাসেবক লীগনেতা আশীষ কুমার মজুমদারসহ আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই হামলায় মদদদাতা শিক্ষকেরা।
দাওয়াত প্রাপ্ত আওয়ামী দোসররা হলেন, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, অধ্যাপক তপন কুমার শাহা, অধ্যাপক শফিক উর রহমান, অধ্যাপক এ এ মামুন ও অধ্যাপক শাহেদুর রশিদ, অধ্যাপক মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান ও অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর, অধ্যাপক আকবার হোসেন, অধ্যাপক ইসমত আরা, অধ্যাপক হোসনে আরা ও জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী জামিল। এরা সবাই পতিত আওয়ামী সরকারের দোসর জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় বিভিন্নভাবে জড়িত।
বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে জাবি শাখা শিবিরের সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ‘সিনেটের নামে আমরা আওয়ামী পুনর্বাসন মেনে নেব না। আমাদের বলতে লজ্জা হয় উপাচার্য নিজেকে গণঅভ্যুত্থানের প্রোডাক্ট দাবি করে, তিনি কীভাবে চিহ্নিত আওয়ামী দোসর ও গণঅভ্যুত্থানে বিরোধিতাকারীদের সিনেটে দাওয়াত দেন। আওয়ামী পুনর্বাসনের চেষ্টা জাবি শিবির কোনোভাবেই মেনে নিবে না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘জাবি প্রশাসন যদি মনে করে তারা কালকের সিনেট অধিবেশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করবে তাহলে আমরা তাদের ছেড়ে কথা বলব না। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই কোনোভাবেই সিনেটে আমরা আওয়ামী দোসরদের মেনে নিব না।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের দাওয়াত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ন্যক্কারজনক কাজ করেছে। জুলাই হামলায় জড়িত কিংবা ফ্যাসিবাদের কোন দোসর যদি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে, তাহলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে তাদের প্রতিহত করব।’
এর আগে গতকাল ২৭ জুন বাগছাস, ছাত্রশিবিরসহ কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মরকলিপি প্রদান করেন, এতে জুলাই হামলায় জড়িতদের সিনেটে দাওয়াত দেওয়া ও বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় এক বছর হলেও সিনেট পুর্নগঠনের উদ্যোগ না নেওয়াকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। আওয়ামী দোসরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সিনেটকে গণ-অভ্যুত্থানের সাথে প্রতারণা এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তাঁরা আওয়ামী দোসরদের অংশগ্রহণে আয়োজিত সিনেটকে প্রহসনের সিনেট উল্লেখ করে তা কোনভাবেই অনুষ্ঠিত হতে না দেওয়ার হুশিয়ারি দেন এবং অনতিবিলম্বে সিনেট সদস্যদের মধ্যে থাকা আওয়ামী দোসরদের অপসারণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।