ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গিবত থেকে বাঁচার উপায়

শিক্ষা ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৪:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

সংগৃহীত ছবি

কারো যখন গিবত করার ইচ্ছা জাগ্রত হবে তখনই কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত গিবতের কঠিন পরিণতির কথা স্মরণ করতে হবে। এতে গিবত করার প্রবণতা আর জাগ্রত হবে না। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় গিবত হলো, কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার সম্বন্ধে এমন কোনো দোষের কথা বলা যা শুনলে সে মনে কষ্ট পায় এবং সে তা অপছন্দ করে। গিবত শুধু মুখের ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং বাচনিকভঙ্গি কিংবা লেখনীর মাধ্যমে অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে গিবত হয়ে থাকে। গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ এবং এটি কবিরা গুনাহ।

নিম্নে গিবত থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

কুরআন ও হাদিসের মর্মবাণী স্মরণ করা : কারো যখন গিবত করার ইচ্ছা জাগ্রত হবে তখনই কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত গিবতের কঠিন পরিণতির কথা স্মরণ করতে হবে। এতে গিবত করার প্রবণতা আর জাগ্রত হবে না।

যার গিবত করা হবে তার পাপ গিবতকারীর আমলনামায় দেয়া হবে এবং গিবতকারীর পুণ্য যার গিবত করা হয়েছে তার আমলনামায় যোগ করে দেয়া হবে। এভাবে গিবত করার কারণে গিবতকারীর পাপের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং পুণ্যের পরিমাণ কমতে থাকে, পরিণতিতে জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। এ ভীতিপ্রদ ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে গিবত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায়।

এ ছাড়া যখন কারো গিবত করার ইচ্ছা হবে, তখনই নিজের মধ্যকার লুকায়িত দোষগুলো স্মরণ করলে অপরের দোষত্রুটি চর্চার আগ্রহ থাকবে না। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা: বলেছেন, সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য যাকে তার নিজের দোষত্রুটি অপরের দোষত্রুটি আলোচনা থেকে বিরত থাকে। (বাজ্জাজ)

অপর এক হাদিসে হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, “ওই ব্যক্তির জন্য ‘তুবা’ নামক জান্নাতের সুসংবাদ দাও, যে নিজে ত্রুটি-বিচ্যুতি অনুসন্ধানের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে অন্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি খোঁজার সুযোগ পায় না।’ (সহিহ আল জামি-৩৬৪৪, বুলুগুল মারাম-১৫১০, তাখরিজুল এহইয়া-৩/১৮৩)

হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকা : হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা হিংসা-বিদ্বেষের কারণেই মানুষ একে অপরকে ঘৃণার চোখে দেখে। আর যখন একে অপরের সাথে খারাপ মনোভাব তৈরি হয়, তখনই মানুষ গিবতে লিপ্ত হয়। অতএব, আমাদের উচিত গিবতকে পরিহার করার জন্য হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

অহঙ্কার থেকে বিরত থাকা : অহঙ্কার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মহান আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। অহঙ্কারের কারণে মানুষ অপরকে তুচ্ছজ্ঞান করে এবং গিবতে জড়িয়ে পড়ে। নিজেকে মহান আল্লাহর নগণ্য বান্দা ভাবতে হবে এবং অপরকে বড় হিসেবে দেখতে হবে। কেননা, নিজেকে বড় ভাবা এবং অপরকে ছোট ভাবা থেকে অনেক সময় গিবত হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘হে ঈমানদারগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে, কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর কোনো নারী যেন অপর নারীকেও উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।’ (সূরা হুজরাত-১১)

অনর্থক কথা বলা থেকে বিরত থাকা : অনর্থক কথা ও অযথা সময় নষ্ট করা থেকেই গিবতের সূত্রপাত। তাই গিবত বা পর দোষচর্চার মতো মারাত্মক অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য অনর্থক কথা ও অযথা সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যে সময়টুকু অবসর পাওয়া যায় সে সময়টুকু মহান আল্লাহর জিকিরে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে এর দ্বারা একদিকে নিজেকে গিবত থেকে বিরত রাখা যাবে, আবার অপরদিকে মহান আল্লাহর জিকির করার কারণে অসংখ্য সওয়াবও অর্জিত হবে।

যথার্থ ধর্মীয় জ্ঞান অনুশীলন : ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবেই আমরা নিজেদের অজান্তে গিবতে লিপ্ত হয়ে পড়ি। ধর্মীয় জ্ঞান থাকলে গিবত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

লজ্জা, অপমান ও মান-ইজ্জতের কথা স্মরণ রাখা : গিবত করার ইচ্ছা হলে তৎক্ষণাৎ কেউ যদি এভাবে চিন্তা করে যে, অমুক আমার গিবত করলে যেমন আমি লজ্জিত ও অপমানিত হবো, তদ্রƒপ আমিও যদি কারো গিবত করি তাহলে সে লজ্জিত ও অপমানিত হবে, কাজেই এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।

অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা : যেসব সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধব গিবত করাকে কোনো দোষেরই ব্যাপার মনে করেন না- এমন সব সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা উচিত।

যাচাই-বাছাই করে কথা বলা : আমাদের কাছে শোনা বা লিখিতভাবে যেসব খবর পৌঁছে থাকে, তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে বৈধ পন্থায় অপরের কাছে বলার এবং পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। কেননা এতে মিথ্যা কথা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই প্রচার করে।’ (মুসলিম-৭)

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

গিবত থেকে বাঁচার উপায়

আপডেট সময় : ১২:৩৪:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

কারো যখন গিবত করার ইচ্ছা জাগ্রত হবে তখনই কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত গিবতের কঠিন পরিণতির কথা স্মরণ করতে হবে। এতে গিবত করার প্রবণতা আর জাগ্রত হবে না। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় গিবত হলো, কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার সম্বন্ধে এমন কোনো দোষের কথা বলা যা শুনলে সে মনে কষ্ট পায় এবং সে তা অপছন্দ করে। গিবত শুধু মুখের ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং বাচনিকভঙ্গি কিংবা লেখনীর মাধ্যমে অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে গিবত হয়ে থাকে। গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ এবং এটি কবিরা গুনাহ।

নিম্নে গিবত থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

কুরআন ও হাদিসের মর্মবাণী স্মরণ করা : কারো যখন গিবত করার ইচ্ছা জাগ্রত হবে তখনই কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত গিবতের কঠিন পরিণতির কথা স্মরণ করতে হবে। এতে গিবত করার প্রবণতা আর জাগ্রত হবে না।

যার গিবত করা হবে তার পাপ গিবতকারীর আমলনামায় দেয়া হবে এবং গিবতকারীর পুণ্য যার গিবত করা হয়েছে তার আমলনামায় যোগ করে দেয়া হবে। এভাবে গিবত করার কারণে গিবতকারীর পাপের পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং পুণ্যের পরিমাণ কমতে থাকে, পরিণতিতে জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। এ ভীতিপ্রদ ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে গিবত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার উপায়।

এ ছাড়া যখন কারো গিবত করার ইচ্ছা হবে, তখনই নিজের মধ্যকার লুকায়িত দোষগুলো স্মরণ করলে অপরের দোষত্রুটি চর্চার আগ্রহ থাকবে না। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা: বলেছেন, সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য যাকে তার নিজের দোষত্রুটি অপরের দোষত্রুটি আলোচনা থেকে বিরত থাকে। (বাজ্জাজ)

অপর এক হাদিসে হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, “ওই ব্যক্তির জন্য ‘তুবা’ নামক জান্নাতের সুসংবাদ দাও, যে নিজে ত্রুটি-বিচ্যুতি অনুসন্ধানের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে অন্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি খোঁজার সুযোগ পায় না।’ (সহিহ আল জামি-৩৬৪৪, বুলুগুল মারাম-১৫১০, তাখরিজুল এহইয়া-৩/১৮৩)

হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকা : হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা হিংসা-বিদ্বেষের কারণেই মানুষ একে অপরকে ঘৃণার চোখে দেখে। আর যখন একে অপরের সাথে খারাপ মনোভাব তৈরি হয়, তখনই মানুষ গিবতে লিপ্ত হয়। অতএব, আমাদের উচিত গিবতকে পরিহার করার জন্য হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

অহঙ্কার থেকে বিরত থাকা : অহঙ্কার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মহান আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। অহঙ্কারের কারণে মানুষ অপরকে তুচ্ছজ্ঞান করে এবং গিবতে জড়িয়ে পড়ে। নিজেকে মহান আল্লাহর নগণ্য বান্দা ভাবতে হবে এবং অপরকে বড় হিসেবে দেখতে হবে। কেননা, নিজেকে বড় ভাবা এবং অপরকে ছোট ভাবা থেকে অনেক সময় গিবত হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘হে ঈমানদারগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে, কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর কোনো নারী যেন অপর নারীকেও উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।’ (সূরা হুজরাত-১১)

অনর্থক কথা বলা থেকে বিরত থাকা : অনর্থক কথা ও অযথা সময় নষ্ট করা থেকেই গিবতের সূত্রপাত। তাই গিবত বা পর দোষচর্চার মতো মারাত্মক অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য অনর্থক কথা ও অযথা সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যে সময়টুকু অবসর পাওয়া যায় সে সময়টুকু মহান আল্লাহর জিকিরে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে এর দ্বারা একদিকে নিজেকে গিবত থেকে বিরত রাখা যাবে, আবার অপরদিকে মহান আল্লাহর জিকির করার কারণে অসংখ্য সওয়াবও অর্জিত হবে।

যথার্থ ধর্মীয় জ্ঞান অনুশীলন : ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবেই আমরা নিজেদের অজান্তে গিবতে লিপ্ত হয়ে পড়ি। ধর্মীয় জ্ঞান থাকলে গিবত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

লজ্জা, অপমান ও মান-ইজ্জতের কথা স্মরণ রাখা : গিবত করার ইচ্ছা হলে তৎক্ষণাৎ কেউ যদি এভাবে চিন্তা করে যে, অমুক আমার গিবত করলে যেমন আমি লজ্জিত ও অপমানিত হবো, তদ্রƒপ আমিও যদি কারো গিবত করি তাহলে সে লজ্জিত ও অপমানিত হবে, কাজেই এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।

অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা : যেসব সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধব গিবত করাকে কোনো দোষেরই ব্যাপার মনে করেন না- এমন সব সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা উচিত।

যাচাই-বাছাই করে কথা বলা : আমাদের কাছে শোনা বা লিখিতভাবে যেসব খবর পৌঁছে থাকে, তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে বৈধ পন্থায় অপরের কাছে বলার এবং পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। কেননা এতে মিথ্যা কথা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই প্রচার করে।’ (মুসলিম-৭)