নারী ক্রিকেটে এক নতুন ইতিহাস রচনা করল ভারতীয় দল। মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত রোমাঞ্চকর ফাইনালে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বাধীন ভারত।
এই জয়ের মাধ্যমে ভারত নারী ক্রিকেটে এক অনন্য মাইলফলক স্থাপন করল। আগে কখনও কোনো নারী দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে জিততে পারেনি ভারত। ২০০৫ ও ২০১৭ সালে তারা রানার্স-আপ হয়েও শিরোপা স্পর্শ করতে পারেনি। অবশেষে ২০২৫ সালের এই আসরে দলটি সেই অপূর্ণতা ঘুচিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো।
এই জয় কেবল ট্রফি জয় নয়—অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এক নতুন অধ্যায়। চ্যাম্পিয়ন ভারত পেয়েছে ৪৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।
এই পুরস্কার অর্থ নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০২২ সালের নারী বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল মাত্র ১.৩২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, ভারতীয় নারী দল এবার আগের চেয়ে প্রায় ২৩৯ শতাংশ বেশি পুরস্কার অর্জন করেছে।
এবারের টুর্নামেন্টে পুরুষ ও নারীর পুরস্কারের ব্যবধানও ভেঙে গেছে। ২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত পুরুষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল ৪ মিলিয়ন ডলার, আর এবার নারী দল তার চেয়েও বেশি অর্থ পুরস্কার পেয়েছে।
ফাইনালের নাটকীয় লড়াই:
প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৪৯.৩ ওভারে করে ২৬৩ রান। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর খেলেন দারুণ ৮৭ রানের ইনিংস, আর ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৬৫ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতীয় বোলারদের সামনে টিকতে পারেনি। রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় ও রেণুকা সিংয়ের বোলিংয়ে গুটিয়ে যায় তারা ৪৬.৫ ওভারে ২১১ রানে।
জয়ের পর আনন্দে ভাসে গোটা ভারত। দেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় অভিনন্দনের বন্যা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বলিউড তারকারাও শুভেচ্ছা জানান নারী ক্রিকেটারদের।
নারী ক্রিকেটে ভারতের এই জয়কে অনেকে তুলনা করছেন ১৯৮৩ সালে পুরুষ দলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই সাফল্য নারী ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক মূল্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
আইসিসি জানিয়েছে, নারী ক্রিকেটে এবার থেকে পুরস্কার অর্থ ও সম্প্রচার আয় আরও বাড়ানো হবে, যাতে বিশ্বের প্রতিটি নারী ক্রিকেট দল সমান সুযোগ পায়।









