নীলফামারীর ডোমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দুররুল আনাম ছিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ও অশালীন বার্তা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলে, ‘স্যার প্রথমে সাধারণ কথা বলতেন, পরে এমন সব কথা বলতেন যা খুবই অশোভন। আমি ভয় ও লজ্জায় কাউকে বলতে পারিনি।’
অন্য এক ছাত্রী বলে, ‘স্যার আমার ইনবক্সে মেসেজ দেন, আমি উত্তর না দিলে রাগও করেন।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠিয়ে কথোপকথনের এক পর্যায়ে অশালীন ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মেসেজ পাঠাতেন। সম্প্রতি কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে এলে বিষয়টি এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি জানার পর তারাও বিব্রত হয়েছেন। বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ‘এমন অভিযোগ ও প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণ পুরো প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক।’
আনোয়ার হোসেন নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমরা আমাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতাম। কিন্তু যদি প্রধান শিক্ষকই এমন আচরণ করেন, তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী আসমাউল হাসান বলেন, ‘এ ঘটনা কেবল ছাত্রীদের মানসিকভাবে আঘাত করেনি, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দ্রুত তদন্ত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক মো. দুররুল আনাম ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমি নিজের ভুল স্বীকার করে ছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। ভবিষ্যতে এমন হবে না।’
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সায়শা সাঈদ তন্নী বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় শিক্ষাপ্রেমী মহল ও অভিভাবক সমাজ মনে করেন, একজন প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড শুধু প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকেই কলঙ্কিত করেনি, বরং ছাত্রছাত্রীদের মানসিক নিরাপত্তা ও শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করেছে। দ্রুত তদন্ত ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।








