বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার ঘটনা। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশের মধ্যে পরপর দুটি পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
বিশ্বকূটনীতিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত এবং পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র চেয়ে আসছিল ইউক্রেন। যদিও পেন্টাগন অনুমতি দিয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে। রাশিয়ার কূটনীতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে পুতিন ট্রাম্পকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করছেন।
রাশিয়ার ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘পোসেইডন’ নামের পরমাণু ড্রোন সাবমেরিন পরীক্ষায় সফল হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুই অস্ত্রই অত্যন্ত ন্যূনতম উচ্চতায় উড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম এবং সমুদ্রের নীচ দিয়ে লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পুতিন নিজে এই পরীক্ষার সাফল্য ঘোষণা করেছেন, যা ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক উত্তেজনাকে আরও জোরালো করেছে।
রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম তাস জানিয়েছে, এই অস্ত্র পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পিত ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন-টমাহক কূটনীতির প্রেক্ষিতে পুতিন এই সময়সূচি কার্যকর করেছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে রাশিয়া এখনো শক্তিশালী পরমাণু রাষ্ট্র।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সম্প্রতি বলেছেন, “ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করলে যুদ্ধ সমাধান হবে না। বরং এটি আরও দীর্ঘ এবং ধ্বংসাত্মক হবে।” রাশিয়া মনে করছে, টমাহক অস্ত্র হাতে পেলেও ইউক্রেনের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমিত।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনও রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক। ট্রাম্প বলেন, তিনি যদি যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পান, তবেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। নতুবা অযথা সময় নষ্ট করবেন না। এর মধ্যেই রাশিয়ার এই পরমাণু পরীক্ষার খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বকূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের এই কৌশল মূলত দুইটি উদ্দেশ্য পূরণ করছে—
- আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার পরমাণু শক্তির উপস্থিতি এবং ক্ষমতা প্রদর্শন।
- যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রমাণ করা যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সহজ নয়।
বর্তমান পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি এই ধরনের পরীক্ষা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে বিশ্বমঞ্চে নতুন নিরাপত্তা সংকটের সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এই খবর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্বযুদ্ধ বা বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি মূল্য, বাণিজ্য এবং মানবিক পরিস্থিতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।









