ঢাকা ১০:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
“বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন” রক্তের সিঁড়ি তৈরি হয়েছে ১৬ বছরের আন্দোলনে : সালাহউদ্দিন আহমদ গাজা দখলের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, সৈন্যদের যুদ্ধে না যাওয়ার আহ্বান তুষারের ‘নগ্ন ভিডিও’ ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি নীলার ট্রাম্পের ১৫ হাজার ডলারের ভিসা বন্ড কর্মসূচি, নিশানায় কারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দুর্নীতি প্রশ্রয় দিতেন না : দুদক চেয়ারম্যান জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ভোট ১১ সেপ্টেম্বর মুক্তির আগেই ‘কুলি’র আয় ২৫০ কোটি প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরে স্বাক্ষর হতে পারে ৫ সমঝোতা স্মারক ২০৩০ সালে আইডিয়াই হবে মূল চালিকা শক্তি: স্যাম অল্টম্যান

লালমনিরহাটের ধরা পড়ছে না দেশী প্রজাতির মাছ।

মাসুদ রানা রাশেদ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৯:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • / ৩৭ বার পড়া হয়েছে


খোদ বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই লালমনিরহাট জেলার ৫টি লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়, পুকুর, ডোবায় ধরা পড়ছে না দেশী প্রজাতির সুস্বাধু মাছ। বিগত ২৫ হতে ৩০ বছরে দেশীয় ২শত ৬০টি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়। প্রাকৃতিক উৎসের মাছ কমে গেলেও হাইব্রিড মাছের উৎপাদন বেড়ে গেছে। ফলে দেশীয় আরো শতাধিক প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, বিদেশী মাত্র ২৪টি প্রজাতির হাইব্রিড মাছ চাষের ব্যাপকতায় দেশীয় ২শত ৫০টি প্রজাতির মাছ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে। কৃষি জমিতে ব্যাপক হারে কীটনাশক ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে খাল-বিল, জলাশয়ের স্বচ্ছ পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর বিষাক্ত পানির কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

আরও জানা যায়, দেশে হাইব্রিড জাতের সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিরর কার্প, কমন কার্প, বিগহেড, থাই সরপুঁটি, থাই কৈ, থাই পাঙ্গাস, ব্যাক কার্প, পাঁচ প্রজাতির তেলাপিয়াসহ ২৪টি প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের মাছ চাষের আগে পুকুর ডোবার পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোয় মাছ, শামুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

মৎস্যজীবীরা জানান, অধিক মুনাফার আশায় হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়গুলো থেকে দেশীয় মাছের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। এক সময়ের অতি পরিচিত দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে কৈ, মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, গুজি আইড়, পাঙ্গাস, বোয়াল, খৈলসার মতো সুস্বাদু দেশীয় মাছগুলো এখন আর তেমন দেখা যায় না। ফলি, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানি, পুতুল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, সরপুঁটি, চেলা, মলা, কালোবাউশ, শোল, মহাশোল, গোঙসা, রায়াক, রয়না, বাতাসি, বাজারি, বেলেসহ ৬৫টি প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ বংশসহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুকুর রয়েছে ২০হাজার ৭শত ৯২টি আয়তন ২ হাজার ৩শত ৫৮.৩হেক্টর। নদী রয়েছে ৮টি আয়তন ১ হাজার ৬শত ৯৬হেক্টর। বিলের সংখ্যা ৫৫টি আয়তন ১হাজার ৬শত ১৩ হেক্টর। প্লাবনভূমির সংখ্যা ৯৮টি আয়তন ৩হাজার ৯শত ৭১ হেক্টর। খালের সংখ্যা ২৬টি আয়তন ২শত ৮৬ হেক্টর। ধানক্ষেতে মাছ চাষ সংখ্যা ৩হাজার ৬শত ১০টি আয়তন ৭শত ৩০হেক্টর। অন্যান্য ৪শত ২৪টি আয়তন ৩শত ৯ হেক্টর। নার্সারীর সংখ্যা ৬শত ৪৮টি আয়তন ২শত ৩৫.৮২ হেক্টর। সরকারী মৎস্য হ্যাচারীর সংখ্যা ১টি। বেসরকারী মৎস্য হ্যাচারীর সংখ্যা ৬টি। মানুষের সৃষ্ট পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় জলাশয়ে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

জানা যায়, নদী, বিল ও জলাশয় থেকে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি স্বল্পতা, যেখানে সেখানে বাঁধ নির্মাণ, নাব্যতা হারানো, পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার, মাছের নিরাপদ আশ্রয় না থাকা ও প্রজনন ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হওয়া, প্লাবনভূমির সাথে সংযোগ খালগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, খরা ও অনাবৃষ্টি, জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছের বংশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকায় ও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এরপরও নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়গুলোয় যে পরিমাণ মাছ সঞ্চিত থাকে তা নির্বিচারে শিকারের ফলে দিন দিন দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লালমনিরহাটের তিস্তা, বুড়ি তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই, ভেবেশ্বর এ এক সময় মাছের ভান্ডার ছিল। এছাড়া লালমনিরহাট জেলার বেশ কিছু নদ-নদী এখন প্রায় বিলীন। এ রকম কয়েকটি নদ-নদী হলো- চাতলা, দেউল। লালমনিরহাট জেলার অনেকগুলো নদ-নদীতে বোরো মৌসুমে এখন ধানের চাষ হয়। লালমনিরহাটের সতী, চাতলা, মালদহ, সাঁকোয়া, ভেটেশ্বের, স্বর্ণামতি, রত্নাই নদীতে ধান ফলানো হয়। তিস্তায় ধান-ভূট্টাসহ বিভিন্ন শস্য উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু এসব নদী-নালা, খাল-বিল খনন ও সংস্কার না করায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কমে গেছে মাছের বংশবৃদ্ধি ও উৎপাদন।

বিগত ২০০০ সালে ৫৪টি প্রজাতির মাছকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন)। আইইউসিএন বিপন্ন প্রজাতির সব মাছকে ৪টি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন- সঙ্কটাপন্ন, বিপন্ন, চরম বিপন্ন ও বিলুপ্ত। সঙ্কটাপন্ন মাছের মধ্যে আছে ফলি, বামোশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজুলি, গাং মাগুর, কুচিয়া, নামাচান্দা, মেনি, চ্যাং ও তারাবাইম। বিপন্ন মাছ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চিতল, টিলা, খোকশা, অ্যালং, কাশ খাইরা, কালাবাটা, ভাঙন, বাটা, কালিবাউশ, গনিয়া, ঢেলা, পাবদা, ভোল, দারকিনি, রানি, পুতুল, গুজি আইড়, টেংরা, কানিপাবদা, মধুপাবদা, শিলং, চেকা, একঠোঁটা, কুমিরের খিল, বিশতারা, নেফতানি, নাপিত কৈ, গজাল ও শাল বাইন। অন্যদিকে চরম বিপন্ন প্রজাতির মাছের তালিকায় রয়েছে ভাঙন, বাটা, নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা, সরপুঁটি, মহাশোল, রিটা, ঘাইড়া, বাছা, পাঙ্গাস, বাঘাইড়, চেনুয়া ও চিলাশোল। লালমনিরহাটের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর দাবি লালমনিরহাটের মৎস্যচাষীসহ আপামোর জনসাধারণের।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

লালমনিরহাটের ধরা পড়ছে না দেশী প্রজাতির মাছ।

আপডেট সময় : ০৬:৫৯:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫


খোদ বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই লালমনিরহাট জেলার ৫টি লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়, পুকুর, ডোবায় ধরা পড়ছে না দেশী প্রজাতির সুস্বাধু মাছ। বিগত ২৫ হতে ৩০ বছরে দেশীয় ২শত ৬০টি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়। প্রাকৃতিক উৎসের মাছ কমে গেলেও হাইব্রিড মাছের উৎপাদন বেড়ে গেছে। ফলে দেশীয় আরো শতাধিক প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, বিদেশী মাত্র ২৪টি প্রজাতির হাইব্রিড মাছ চাষের ব্যাপকতায় দেশীয় ২শত ৫০টি প্রজাতির মাছ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে। কৃষি জমিতে ব্যাপক হারে কীটনাশক ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে খাল-বিল, জলাশয়ের স্বচ্ছ পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। আর বিষাক্ত পানির কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

আরও জানা যায়, দেশে হাইব্রিড জাতের সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিরর কার্প, কমন কার্প, বিগহেড, থাই সরপুঁটি, থাই কৈ, থাই পাঙ্গাস, ব্যাক কার্প, পাঁচ প্রজাতির তেলাপিয়াসহ ২৪টি প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের মাছ চাষের আগে পুকুর ডোবার পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোয় মাছ, শামুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

মৎস্যজীবীরা জানান, অধিক মুনাফার আশায় হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়গুলো থেকে দেশীয় মাছের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। এক সময়ের অতি পরিচিত দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে কৈ, মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, গুজি আইড়, পাঙ্গাস, বোয়াল, খৈলসার মতো সুস্বাদু দেশীয় মাছগুলো এখন আর তেমন দেখা যায় না। ফলি, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানি, পুতুল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, সরপুঁটি, চেলা, মলা, কালোবাউশ, শোল, মহাশোল, গোঙসা, রায়াক, রয়না, বাতাসি, বাজারি, বেলেসহ ৬৫টি প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ বংশসহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুকুর রয়েছে ২০হাজার ৭শত ৯২টি আয়তন ২ হাজার ৩শত ৫৮.৩হেক্টর। নদী রয়েছে ৮টি আয়তন ১ হাজার ৬শত ৯৬হেক্টর। বিলের সংখ্যা ৫৫টি আয়তন ১হাজার ৬শত ১৩ হেক্টর। প্লাবনভূমির সংখ্যা ৯৮টি আয়তন ৩হাজার ৯শত ৭১ হেক্টর। খালের সংখ্যা ২৬টি আয়তন ২শত ৮৬ হেক্টর। ধানক্ষেতে মাছ চাষ সংখ্যা ৩হাজার ৬শত ১০টি আয়তন ৭শত ৩০হেক্টর। অন্যান্য ৪শত ২৪টি আয়তন ৩শত ৯ হেক্টর। নার্সারীর সংখ্যা ৬শত ৪৮টি আয়তন ২শত ৩৫.৮২ হেক্টর। সরকারী মৎস্য হ্যাচারীর সংখ্যা ১টি। বেসরকারী মৎস্য হ্যাচারীর সংখ্যা ৬টি। মানুষের সৃষ্ট পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় জলাশয়ে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

জানা যায়, নদী, বিল ও জলাশয় থেকে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি স্বল্পতা, যেখানে সেখানে বাঁধ নির্মাণ, নাব্যতা হারানো, পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার, মাছের নিরাপদ আশ্রয় না থাকা ও প্রজনন ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হওয়া, প্লাবনভূমির সাথে সংযোগ খালগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, খরা ও অনাবৃষ্টি, জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছের বংশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকায় ও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এরপরও নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়গুলোয় যে পরিমাণ মাছ সঞ্চিত থাকে তা নির্বিচারে শিকারের ফলে দিন দিন দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লালমনিরহাটের তিস্তা, বুড়ি তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই, ভেবেশ্বর এ এক সময় মাছের ভান্ডার ছিল। এছাড়া লালমনিরহাট জেলার বেশ কিছু নদ-নদী এখন প্রায় বিলীন। এ রকম কয়েকটি নদ-নদী হলো- চাতলা, দেউল। লালমনিরহাট জেলার অনেকগুলো নদ-নদীতে বোরো মৌসুমে এখন ধানের চাষ হয়। লালমনিরহাটের সতী, চাতলা, মালদহ, সাঁকোয়া, ভেটেশ্বের, স্বর্ণামতি, রত্নাই নদীতে ধান ফলানো হয়। তিস্তায় ধান-ভূট্টাসহ বিভিন্ন শস্য উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু এসব নদী-নালা, খাল-বিল খনন ও সংস্কার না করায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কমে গেছে মাছের বংশবৃদ্ধি ও উৎপাদন।

বিগত ২০০০ সালে ৫৪টি প্রজাতির মাছকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন)। আইইউসিএন বিপন্ন প্রজাতির সব মাছকে ৪টি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন- সঙ্কটাপন্ন, বিপন্ন, চরম বিপন্ন ও বিলুপ্ত। সঙ্কটাপন্ন মাছের মধ্যে আছে ফলি, বামোশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজুলি, গাং মাগুর, কুচিয়া, নামাচান্দা, মেনি, চ্যাং ও তারাবাইম। বিপন্ন মাছ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চিতল, টিলা, খোকশা, অ্যালং, কাশ খাইরা, কালাবাটা, ভাঙন, বাটা, কালিবাউশ, গনিয়া, ঢেলা, পাবদা, ভোল, দারকিনি, রানি, পুতুল, গুজি আইড়, টেংরা, কানিপাবদা, মধুপাবদা, শিলং, চেকা, একঠোঁটা, কুমিরের খিল, বিশতারা, নেফতানি, নাপিত কৈ, গজাল ও শাল বাইন। অন্যদিকে চরম বিপন্ন প্রজাতির মাছের তালিকায় রয়েছে ভাঙন, বাটা, নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা, সরপুঁটি, মহাশোল, রিটা, ঘাইড়া, বাছা, পাঙ্গাস, বাঘাইড়, চেনুয়া ও চিলাশোল। লালমনিরহাটের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর দাবি লালমনিরহাটের মৎস্যচাষীসহ আপামোর জনসাধারণের।