বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি, যখন ঢেউয়ের দোলায় আন্দোলিত হয়, তখন পূর্ব আকাশে সূর্যের হালকা রক্তিম বৃত্তটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সূর্যোদয়ের আলোতে আলোকিত হয়ে পাল্টে যায় সমুদ্রের জলের বর্ণ। প্রতিদিন নতুন সূর্য পুব আকাশে এনে দেয় এক অনন্য শোভা। সদ্য ওঠা সূর্য, নীল জলরাশি, সুদীর্ঘ বেলাভূমি আর পাশে ঘন সবুজ ঝাউবন। সব মিলিয়ে অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। আবার বেলা গড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্যও এক অনন্য সৌন্দর্য বয়ে আনে। গোধূলিতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ সূর্যাস্তের দৃশ্যটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
একেবারে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কূলে নিরিবিলি একটি স্থান, যা ‘সাগরকন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটা। যার খ্যাতি এখন দেশ থেকে বিদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাখাইন অধ্যুষিত জনপদ, দক্ষিণে অন্তহীন সমুদ্র, পূর্বে গঙ্গামতি সংরক্ষিত অরণ্যাঞ্চল ও পশ্চিমে খাজুরার বনাঞ্চল। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি কুয়াকাটা। এছাড়াও এখানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান।
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানসমূহ
- কুয়াকাটার কুয়া
- জিরো পয়েন্ট
- শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার
- মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহার
- নৌকা জাদুঘর
- আদিবাসী রাখাইন পাড়া
- কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক)
- গঙ্গামতির চর
- চর বিজয়
- শুঁটকি পল্লী
- লেম্বুর বন
- তিন নদীর মোহনা
- ফাতরার বন
- লাল কাঁকড়ার চর
- পানি জাদুঘর
কুয়াকাটার কুয়া
‘কুয়া’ শব্দটি এসেছে ‘কূপ’ থেকে। ধারণা করা হয়, বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে আরাকানিরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তখন তারা সুপেয় পানির অভাবে প্রচুর কূপ খনন করেছিল, সেই থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয় কুয়াকাটা।
কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট
এখানে রয়েছে ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান এবং একই স্থানে মসজিদ ও মন্দির। জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে শুনতে পারবেন সমুদ্রের উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মোহনীয় গর্জন। ঘোড়া ও ওয়াটার বাইকে চড়ে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।
শুঁটকি পল্লী
সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে বিচ হয়ে যেতে পারবেন শুঁটকি পল্লী। সেখানে গেলে জেলেদের শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়া উপভোগ করতে পারবেন। চাইলে কম দামে পছন্দের মাছের শুঁটকি কিনতে পারবেন।
লেম্বুর বন ও তিন নদীর মোহনা
এখান থেকে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সন্ধ্যায় লেম্বুর বনের পাখির কিচিরমিচির শব্দ প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করবে।
ফাতরার বন
সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ফাতরার বনের উদ্দেশ্যে ট্রলার ছাড়ে। এখানে গেলে সুন্দরবনের প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়বে। দেখা যাবে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি ও গাছপালা।
চর বিজয়
গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা একটি ছোট দ্বীপ, যা ইংরেজিতে ভিক্টোরিয়া আইল্যান্ড নামে পরিচিত। এর আয়তন প্রায় ৫ হাজার একর এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার। জেলেদের কাছে ‘হাইরের চর’ নামে পরিচিত।
লাল কাঁকড়ার চর
এই নয়নাভিরাম দ্বীপে সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি দেখা যায়। যা প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমোহিত করে।
কুয়াকাটার জাতীয় উদ্যান ও ঝাউবন
সৈকতের পাশে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় উদ্যান। এখানে বহুসংখ্যক উঁচু ঝাউগাছ থাকায় এটি ‘ঝাউবন’ নামে পরিচিত।
ফ্রাই মার্কেট
দুপুরের পর থেকেই পর্যটকদের আনাগোনায় জমে ওঠে এই মার্কেট। এখানে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ বারবিকিউ ও ফ্রাই করে খাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার
কুয়াকাটার একটি প্রাচীন নিদর্শন এটি। এখানে দেখা যায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি।
কেরানিপাড়া ও রাখাইন মার্কেট
রাখাইনদের এ পল্লীতে ২২টি পরিবারের বসবাস। সেখানে গেলে রাখাইনদের জীবনধারা, বিশেষ করে কাপড় বুনন ও বিন্নি ধানের পিঠা তৈরির দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য বন্দর
এটি দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে এখানে বিক্রি করেন।
কীভাবে যাবেন কুয়াকাটায়
ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী বা কলাপাড়া, সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি বিলাসবহুল পরিবহন কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।