গাজায় ইসরাইলের দখলদারিত্ব পুরোপুরি শেষ না হলে হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে না। এছাড়া গাজায় বিদেশি প্রশাসনের কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির শীর্ষ নেতা মুসা আবু মারজুক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমরা সব মধ্যস্থতাকারীকে বলেছি হামাস দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যদি সেই দখলদারিত্ব শেষ হয়, তাহলে ফিলিস্তিনিরাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে হামাসের কাছে কোনো অস্ত্র থাকবে না। কারণ সেগুলো ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব।
গাজায় দখলদারিত্ব না থাকলে আমাদের অস্ত্রেরও কোনো প্রয়োজন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়েছে ইহুদিবাদীরা।
অন্যদিকে হামাসও শেষমেশ এতে রাজি হওয়ায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলি (জীবিত ও মৃত) সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যাকর হবে। আর এরপরই হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। গাজায় গঠিত হবে একটি অন্তর্বর্তী সরকার বা প্রশাসন। আর এ প্রশাসনের প্রধান হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউজে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে তৈরি এ অন্তর্বর্তী সরকারের নাম হবে ‘দ্য বোর্ড অব পিস’ বা শান্তি প্রশাসন। যেটির প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন তিনি৷ ট্রাম্প জানান, আরব ও ইসরাইলিদের অনুরোধেই তিনি এ দায়িত্ব নিচ্ছেন।
এদিকে ঘোষিত ২০ দফার ৯ দফাতেও অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে ট্রাম্প থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে। গাজার জনগণের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তারা। এ কমিটিতে যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এর তদারকি ও নজরদারি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান ‘পিস বোর্ড’, যার নেতৃত্ব ও সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন এ অন্তর্বর্তী সরকারে অন্য বৈশ্বিক নেতারাও থাকবেন। যার মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম রয়েছে। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ব্রিটিশ সেনাদের ইরাকে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন টনি ব্লেয়ার। এ কারণে তাকে ইরাকের কসাই হিসেবেও অনেকে অভিহিত করে থাকেন।
এদিকে গাজার নতুন অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। এছাড়া তারা ফিলিস্তিনিদের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের বাঁছাই করে পরবর্তীতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বাধীন একটি সরকার গঠন করবেন। সঙ্গে গাজায় একটি সুশঙ্খল পুলিশ বাহিনী গঠন করে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ সরকারের দায়িত্ব থাকবে গাজা ও হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণ করা।